আলোচিত গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ
অন্য আসামিদের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতার কথা জানিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে খালেদা ও তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।
৯৮ পৃষ্ঠার ওই রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, মামলাটিতে মেসার্স গ্লোবাল এগ্রোটেড লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক দুই ভাই সৈয়দ গালিব আহমেদ ও সৈয়দ তানভীর আহমেদসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে। এটি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারের বিষয়।
রায়ে মামলার সহোদর সৈয়দ গালিব আহমেদ ও সৈয়দ তানভীর আহমেদকে ১৫ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে আত্মসমর্পণের পর তারা জামিনের আবেদন করলে সেটি আইন অনুযায়ী মঞ্জুর করতেও বলা হয়েছে।
সহোদর ওই দুই ভাইয়ের মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বুধবার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হয়।
এতে রায়ের কপি প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কমলাপুরের কন্টেইনার টার্মিনালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এতে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক।
এতে বলা হয়, আরাফাত রহমান কোকো তার মা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার থেকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে গ্যাটকোর কাছে ঠিকাদারির অবৈধ অর্থের অর্ধেক দাবি করেন। পরে মায়ের সম্মতি আদায় করে গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দেন আরাফাত রহমান। অনভিজ্ঞ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
মামলার পরদিনই খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
পরে মামলাটি বাতিল চেয়ে সৈয়দ গালিব আহমেদ ও সৈয়দ তানভীর আহমেদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই দুই ভাইকে জামিন দিয়ে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না সেটি জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর আবেদনটি খারিজ করে রায় দেয় হাইকোর্ট। যার পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হলো বুধবার।
আদালতে দুই ভাইয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।