বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সালমান রহমানের মন্তব্যে মর্মাহত বুয়েট

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২১ ২২:৪৫

প্রকল্পে কনসালটেন্ট বা পরামর্শক নিযুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান (পরিবেশ প্রকৌশল) প্রফেসর ড. মো. দেলোয়ার হোসেইন জানিয়েছেন, ‘সালমান এফ রহমান একজন সিনিয়র লোক। বুঝে-না বুঝে কথা বলেন। সঠিকভাবে শতভাগ দায়িত্ব পালনের পরও দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্যে আমি খুবই মর্মাহত।’  

সাভার বিসিক চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্পে ভুল কনসালটেন্সির কারণে দেশ সাংঘাতিক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের এমন বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

প্রকল্পে কনসালটেন্ট বা পরামর্শক নিযুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান (পরিবেশ প্রকৌশল) প্রফেসর ড. মো. দেলোয়ার হোসেইন জানিয়েছেন, ‘সালমান এফ রহমান একজন সিনিয়র লোক। বুঝে-না বুঝে কথা বলেন। সঠিকভাবে শতভাগ দায়িত্ব পালনের পরও দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্যে আমি খুবই মর্মাহত।’

তিনি দাবি করেন, ‘সরকারি কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সম্পৃক্ত হলে দায়িত্বের ভার অনুযায়ী কাজ করে। চামড়া শিল্প নগরীতে বুয়েটের দায়িত্ব ছিল কারিগরি পরামর্শ ও কাজে মান বজায় রাখার বিষয়ে তদারকি সহায়তা দিয়ে যাওয়া। পরামর্শক হিসেবে বুয়েট সঠিক কাজটি করেছে বলেই শত বাঁধাবিপত্তি পেরিয়ে দেশ আজ বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর কমপ্লিট রূপ দেখতে পাচ্ছে।’

‘কিন্তু তিনি (সালমান এফ রহমান) শুধু আমাকেই খাটো করেননি, দেশের প্রকৌশল জগতে সবচেয়ে মর্যাদার প্রতিষ্ঠান স্বনামধন্য বুয়েটকেও কলুষিত করেছেন। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, এটা অনৈতিক ও অন্যায়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।’

এর আগে গত মঙ্গলবার সাভার চামড়া শিল্প নগরী কমপ্লায়েন্ট না হওয়ার পেছনে বুয়েটকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘শিল্পটিকে কমপ্লায়েন্ট না করতে পারার অন্যতম কারণ হলো যে চাইনিজ ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারা সঠিকভাবে কাজটি করেনি। আরেকটা কথা আমি বলতে চাই। এই সাভার সিইটিপির হোল থিংক, একটা তো ছিল কন্ট্রাক্ট বা কন্ট্রাক্টর। কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, কন্ট্রাক্টরের চেয়ে বড় দোষ হলো কনসালটেন্টের। এখানে কনসালটেন্টটা ছিল আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার যখনই কিছু করতে চায় তখন বুয়েটকে বলা হয়। তারা একটা সুপারিশ দেয়, আমরা সেটি গ্রহণ করি। এটাই হলো গর্ভমেন্টের মাইন্ডসেট।’

‘কিন্তু এই সিইটিপি কেইসে আমি কিন্তু মনে করি বুয়েট আমাদেরকে কিন্তু সাংঘাতিকভাবে লেটডাউন-ই করে নাই, দেশের সাংঘাতিকরকম ক্ষতি করেছে। আই হ্যাভ অ্যাট ট্রিমেন্ডাস নাম্বার অফ মিটিং দ্যাট—বুয়েটের যে কনসালটেন্ট আছেন, উনি সব সময় আমাদেরকে এনশিউর করতেছে আগামী ১৫-২০ দিনে এটা ঠিক হয়ে যাবে। লাস্টে যখন এটা হলো না তখন উনি ব্লেম করতে শুরু করলেন, যারা এটা ব্যবহার করেন তারা ঠিকমতো ব্যবহার করছেন না। ওনাদের বুয়েটের নিজের ডিজাইনে যে ফল্ট আছে, কন্ট্রাক্টরদেরকে কন্ট্রোল করার যে ফল্ট আছে—ওইগুলো নিয়ে কিন্তু ওনারা কোনো দিন এটা স্বীকার করতে রাজি হন নাই।’

উপদেষ্টার এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রকল্পের বুয়েট কনসালটেন্ট বা পরামর্শক নিযুক্ত হওয়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান (পরিবেশ প্রকৌশল) অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেইন এর কাছে মতামত জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

এর জবাবে অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেইন বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে আমার ভুল থাকলে আমাকেই বলতে পারতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ধরে কথা বলা উচিত হয়নি। আমাকেও এভাবে বলতে পারেন না। সালমান এফ রহমান যা করেছেন তা ভালো হয়নি, এটা মানহানিকর। মানহানির মামলা করলেই ভালো হতো। যদিও সেদিকে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।’

ওই অনুষ্ঠানে শিল্পনগরীর বেহাল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপদেষ্টা আরও জানান, ‘যেহেতু একটা ইনভেস্টমেন্টটা হয়ে গেছে। এটাকে এখন বাদ দিয়ে ভেঙে দিয়ে আবার নতুন করে করাটা ইজ নট পসিবল। এটা নট প্র্যাকটিক্যাল। কিন্তু যেটা করা যায়, যা ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, এটার ম্যানেজমেন্ট এবং এটাকে আমরা বিএমআরইই যদি আমরা করতে পারি, এটাকে যদি আমরা একটা প্রফেশনাল ইন্টারন্যাশনাল কাউকে দিয়ে পিপিপি ভিত্তিতে দিয়ে ঠিক আছে তুমি এটা টেকওভার করো, এটাকে ঠিক করার জন্য যা টাকা-পয়সা লাগবে তুমি এটাতে ইনভেস্ট করো আর তুমি এটা ওভার অফ পিরিয়ড টাইম চার্জ করে তা রিকোভার করে। এটা একটা হতে পারে।’

‘আরেকটা মডেল হতে পারে, ঠিক আছে তুমি আমাদেরকে এটা বলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে এলডব্লিউজি স্ট্যান্ডার্ডে, এলডব্লিউজি কমপ্লায়েন্সে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশনে -যা যা করার জন্য আর কত টাকা লাগবে কত ইনভেস্টমেন্ট লাগবে সেটা তোমরা আমাদেরকে জানাও, এবং এটা ভবিষ্যতে কীভাবে ম্যানেজ করা যাবে সেটা তোমরা আমাদেরকে বলো।’

বর্তমান স্ট্যাকচার যা রয়েছে তার সক্ষমতা কতটা এ প্রক্রিয়ায় কাজ করবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা হলে তো হলই। না হলে যতোটা ট্যানারির জন্য এর ক্যাপাসিটি আছে, তা দিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। বাকিগুলোর জন্য পৃথক আরেকটি শিল্পনগরীর বিষয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদের।’

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে পরামর্শক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেইন জানান, ‘আসলে ট্যানারির লোকেরা চায় না একটা আন্তর্জাতিকমানের কমপ্লিট চামড়া শিল্প নগরী হোক। তারা উপদেষ্টাকে কী বুঝিয়েছেন, তিনি কী বুঝেছেন সেটি তিনিই ভাল বলতে পারবেন। আমি মনে করি, আরও শিল্প নগরী তৈরি করা হলেও সেখানেও একই সমস্যা থাকবে। যদি না আমরা সিইটিপি ব্যবহারবিধি যথাযথ অনুসরণ না করি। সময় সময়ে এর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ পরিবর্তন না করি। একইভাবে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে সক্ষম কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করতে না পারি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এ সবের সার্বিক কর্মকাণ্ড যদি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিসিক বা শিল্প মন্ত্রণালয় কঠোর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তাহলে কোনো উদ্দেশ্যই সফল হবে না। সেখানে আরেকটি প্রকল্প হতে পারে। সেখানে সরকারের আবারও টাকা খরচ হবে। কিছু লোকের পকেট ভরবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

প্রশ্ন রেখে প্রকল্পে বুয়েটের পরামর্শক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেইন দাবি করেন, ‘আমাকে ২১ মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আমি যদি ব্যর্থই হতাম, তাহলে আমাকে এক্সটেনশন করে বছরের পর বছর রাখা হলো কেন? শতভাগ প্রফেশনালিজম থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চামড়া শিল্প নগরী নিয়ে যা হয়েছে, বিসিক বা শিল্প মন্ত্রণালয় যা করেছে এবং চানিজ কোম্পানি যেভাবে অসহযোগিতা করেছে, ওই পরিস্থিতিতে বুয়েট পরামর্শক হিসেবে ছিল বলেই দেশ আজ একটি কমপ্লিট চামড়া শিল্প নগরী পেয়েছে। নতুবা কী হতো আল্লাহই ভাল জানেন।’

তাহলে পরামর্শক হিসেবে আপনাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেইন বলেন, ‘প্রকল্পটির টেন্ডার আহ্বান করেছে বিসিক। এর নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষও ছিল তারাই। সেখানে সিইটিপি নির্মাণ কাজের সুপারভিশন ও মনিটরিংয়ে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পায় বুয়েট। যেখানে সিইটিপিকে আরও সুযোপযোগী করতে সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্লুয়েজ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও যুক্ত হয়।’

‘কিন্তু দায়িত্ব পালনকালে চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অসহযোগিতা সত্বেও শতভাগ চেষ্টা করেছি প্রকল্পটিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার। সুপারভিশনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছি বলেই দায়িত্বে থাকা চাইনিজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নানা অনিয়মের কারণে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করতে পেরেছি। এভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চলতি বছর ৩০ জুন অর্পিত দায়িত্বও শেষ হওয়ার আগেই চামড়া শিল্প নগরীর একটি পরিপূর্ণ কাঠামো রূপ পায়। যার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে।’

বুয়েটের এই পরামর্শক জানান, ‘এখানে সিইটিপি কমপ্লিট। ক্যাপিটাল মেশিনারিজের ফাংশনাল প্রবলেম থাকতেই পারে। সব যন্ত্রপাতিরই সক্ষমতার একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এরপর তা পরিবর্তন করতে হয়। তারপর আবার কাজ করে। আবার ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নতুবা প্রবলেম থাকবেই।’

তবে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচল থাকলেও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বা সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সমস্যা এখনও আছে। এই বর্জ্য অপসারণে শিল্পনগরীর ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে কঠিন বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ করে আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিল গ্রাউন্ডে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন ওই বর্জ্যে রাসায়নিক থাকার কারণে তা নিতে রাজি হয়নি। পরে পরিবেশসম্মতভাবে এই সলিড ওয়েষ্ট বর্জ্য ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা (এসপিজিএস) কাজ করতে নিয়োগ দেয়া হয় হেলেন নামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা দায়িত্ব পেয়েও কিছুই করেনি।

এই পরিস্থিতিতে ভিক্টরি জিলেটিন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের প্রতিদিন ১০০ টন কঠিন বর্জ্য কনজিউ্যম করার কথা। কিন্তু তারা সেটি করছে দৈনিক মাত্র ২০ টন। অথচ বর্তমানে সময়ের ভিন্নতায় প্রতিদিন ৫০ থেকে ২০০ টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এখানে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয় রয়েছে। আর প্রকল্পের অন্যান্য অবকাঠামো ঠিক রাখার বিষয়টি তো রুটিন ওয়ার্ক এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের বিষয়।

তিনি বলেন, ‘বুয়েট বা আমি তো কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নেই। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথরিটি হচ্ছে বিসিক বা শিল্প মন্ত্রণালয়। সেখানে বুয়েটের দোষটা কোথায়? ভুলটাই বা কী করল।’

এ বিভাগের আরো খবর