কোরবানি ঈদ উপলক্ষে দেশব্যাপী চলমান বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে মানুষের চলাচল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বুধবার মধ্যরাত থেকেই লঞ্চ চলাচল শুরুর অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই ঢাকা নদী বন্দর সদরঘাটে অবস্থানরত লঞ্চ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে যাত্রী কিংবা টার্মিনালে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল নৌযানে ডেকের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সাপেক্ষে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ঢাকা-বরিশাল রুটে ডেকের ভাড়া হবে চারশত টাকার কিছু বেশি। তবে প্রথম শ্রেণি ও কেবিনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে।
লঞ্চ প্রস্তুতির ব্যাপারে ঢাকার লঞ্চ এমভি মানামীর মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্দেশনা পাওয়ার পর লঞ্চ ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামীকাল যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে আমরা যাত্রা শুরু করব।’
তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে লঞ্চগুলো। পূর্বে ডেকে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ২০০ টাকা, যা বর্তমানে ৪০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতই থাকবে। ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে এমভি পারাবত ১০, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৯, কীর্তনখোলা ১০ এবং মানামী যাত্রী নিয়ে যাবে। সরকারি সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
ঈদ পূর্ববর্তী লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি নৌ-শ্রমিকরাও। মালামাল পরিবহনে ব্যস্ত না থাকলে হাসিমুখে দেখা যায় তাদের। তাদের মধ্যে একজন আসাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লঞ্চ চলব আমরা মেলা খুশি। ঈদে বোনের লাইজ্ঞ্যা জামা কিনতে পারমু। এমনে ঈদ আইলে মাইনশে ৫-১০ টেহা বেশি ওই দেয়।’
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাত ১২ টার পর থেকে লঞ্চ চলতে থাকবে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে লঞ্চ যাবে চাঁদপুর। তারপর যাবে সুরেশ্বর ওয়াপদা, তারপরে ৮টার দিকে ইলিশা এবং বরিশালের দিকে লঞ্চ যাবে। সব লঞ্চ আগামীকাল বিকেলের দিকে ছাড়বে। দুপুরে মুলাদি, তারপর চাঁদপুরে প্রতিনিয়তই ১০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর পরই জাহাজ আছে।
স্বাস্থ্যবিধির মানার ব্যাপারে নিউজবাংলাকে জয়নাল বলেন, ‘আমাদের লঞ্চগুলো আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী ওঠা নামা করে আসছে। আমরা পূর্ববর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে যেসব বিধিনিষেধ ও নিয়মকানুন জানানো হয়েছে সেগুলো মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে এসেছি। আগামীকাল থেকে তা পুরোদমে আবারও প্রচারণা চালানো হবে এবং তা বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকা হবে।
‘মন্ত্রীমহোদয় আজকে পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি সবাইকে বলে গেছেন, মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী ঢুকবে না। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।’
ভাড়ার ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক জানান, কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ ভাড়া নির্ধারণ করেছে সেই ভাড়াতেই যাত্রীরা যাতায়াত করবে। ডেকে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি থাকবে। আর যাত্রী পরিবহন করা হবে ডেকের অর্ধেক। কোনো যাত্রীর নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেয়া হলে সে ব্যাপারে অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্দেশনার বেশি যাত্রী বহন করলে লঞ্চের মালিক বা কর্তৃপক্ষকে জরিমানাও গুনতে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে মালিক সমিতির সাথে মিটিং করে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে এবং ভাড়া ও যাত্রী বহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।’