ডিসেম্বরে ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সোমবার জানান, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার দেয়া হবে।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ (সোমবার বিকেলে) এই সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।’
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মোমেন বলেন, ‘অনেক দেশেই এমন আছে তারা তাদের জাতির পিতার নামে পুরস্কার দেয়। আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ভারতে যেমন গান্ধী পুরস্কার আছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে মাতিবা বা নেলসন ম্যান্ডেলা অ্যাওয়ার্ড। সব দেশেই এমন থাকে। তাছাড়া এই বছর আমাদের বিশেষ বছর, তাই আমরা এটা করতে চাচ্ছি। তাই আমরা ঐতিহাসিক কিছু করতে চাচ্ছি।’
‘আমরা চাচ্ছি সম্মেলনটা সরাসরি করতে। আমরা আশা করছি, সে সময় মহামারির প্রকোপটা কমে আসবে। আমরা এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের আনতে চাই না। বরং আমরা আনতে চাই বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত শিল্পী, গায়ক, বুদ্ধিজীবী, সৃজনশীল কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শান্তি অ্যাক্টিভিস্ট, শান্তিকর্মী, যারা প্রকৃত শান্তির জন্য কাজ করেন।’
নভেম্বরে এ নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন সব ঠিক করা হবে।’
লকডাউন মানে না মানুষ
মোমেন বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের সংক্রমণটা অনেক বেড়ে গেছে। একেবারে গ্রামে পর্যন্ত চলে গেছে। কারণ আমাদের লোকজন তো লকডাউনটা ঠিকমতো মানে না। স্বাস্থ্যবিধি একদমই মানে না। এই না মানার ফলে আপনি যত হাসপাতাল বাড়ান, সিট বাড়ান, ডাজ নট ম্যাটার। যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন কিছুর অভাব হবেই। সেই জন্য রোগীর সংখ্যা যাতে কম হয়, সে জন্য স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলতে হবে।’
‘সিলেটের কথাই বলি, সিলেটে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ৬০ পার্সেন্ট। যেখানে আগে এক বা দুই পার্সেন্ট ছিল। এর কারণ হলো কোনো লোক লকডাউন মানেটানে না। স্বাস্থ্যবিধি মানে না। আমাদের ভয় হলো, এই ঈদের সময়, ঈদের নাম নিয়ে অনেক মানুষ বাইরে যায়। আমাদের ধারণা হলো, ঈদের পরও যদি মানুষ ঘরে থাকে তবে সংক্রমণটা কমবে। তাহলে অনেক দিন বাঁচতে পারবেন।’
চীনের ভ্যাকসিন স্টোরেজে বাংলাদেশ
মন্ত্রী বলেন, চীনের উদ্যোগে কোভিড মোকাবিলায় ৬টি দেশের স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিসে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। যাতে ভ্যাকসিনের প্রবাহ ঠিক রাখা যায়। এই উদ্যোগে দারিদ্র্য দূরীকরণের বিষয়টিও থাকছে। আপাতত ৬টি দেশ যাত্রায় থাকলেও অন্যদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। জাপান বাংলাদেশকে ভ্যাকসিনের বিষয়ে সহায়তা দিতে চেয়েছে। কবে দেবে এটা জানায়নি। ভ্যাকসিন আনতে চীন সরকারের কোনো বাধা নেই। চাহিদামতো পাঠাবে।’ বিদেশে পড়াশোনা করছে এমন শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদানে বয়সের সীমা না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এখানে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। কোভিডের কারণে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেড়েছে। তারা এটা নিয়ে কাজ করবে। এই দরিদ্র দূর করার চেষ্টার কেন্দ্র হবে চীনে। চীন ভারতকেও এই উদ্যোগে যোগ দিতে আহবান জানিয়েছে।’
‘এর আগে ভারতের উদ্যোগে সার্ক কান্ট্রিগুলো মিলে একটি ভ্যাকসিন ফান্ড তৈরি হয়।’
ভ্যাকসিন আমদানি-রপ্তানির দায় আমাদের না
ভ্যাকসিন আমদানির গতি শ্লথ, সংসদীয় কমিটির এই উদ্বেগ সম্পর্কে মোমেন বলেন, ‘গতকাল ছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১তম মিটিং। মিটিংয়ে আমরা কী করি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির ধারণা, টিকা খুব স্লো আসতেছে। যা আজ পত্রিকায় এসেছে। আসলে এই ধারণা ঠিক না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনও ভ্যাকসিন যায়নি। আমরা শুরুতেই ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু ভারতের করোনা পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম। এখন তো কোনো সমস্যা নাই। স্মুথলি আগাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাকে লজিস্টিকও দেখতে হবে। আপনি তো এক দিনে দুই/আড়াই লাখ ডোজের বেশি মানুষকে দিতে পারবেন না। ওনারা যে উদ্বেগটা জানিয়েছেন তা ওনারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানালেই পারতেন। ভ্যাকসিন আমদানি-রপ্তানির দায় আমাদের না।’