স্ত্রী হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ড নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস। উপায়ান্তর না দেখে দেশের জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীর কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়ে লিখলেন চিঠি।
সেই চিঠি আমলে নিয়ে বিনা ফিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করে দিলেন আইনজীবী। আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসের ফাঁসির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেয়।
রায়ে আসামির সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
আসামিকে কনডেম সেল থেকে দ্রুত সাধারণ সেলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি বিনা ফিতে মামলা পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ধন্যবাদ দেয় সর্বোচ্চ আদালত, যেটি পূর্ণাঙ্গ রায়েও উল্লেখ থাকবে বলেও জানায় আপিল বিভাগ।
আদালতে আসামি স্বপনের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
পরে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট আমার কাছে একটি চিঠি আসে নীলফামারী কারাগার থেকে। চিঠিতে একজন আসামি বাঁচার আকুতি জানিয়ে তার পক্ষে মামলা লড়তে অনুরোধ করেন। পরে বিষয়টি দেখে মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করে আপিল বিভাগে তার পক্ষে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই।
‘এরপর মামলাটি সম্প্রতি আপিল বিভাগের তালিকায় আসে। মামলায় আসামি স্বপনের পক্ষে আমরা শুনানি করি। আদালত উভয় পক্ষকে শুনে তার সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় দেন।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
একই বছরের ২৮ অক্টোবর স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন সৈয়দপুর থানার এসআই শফিউল হক। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এরপর মামলাটি হাইকোর্টে এলে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এরপর মামলাটি যায় আপিল বিভাগে। দীর্ঘদিন ধরে আপিল শুনানির অপেক্ষায় ছিল মামলাটি।
এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে চিঠি লেখেন আসামি।
এতে তিনি বলেন, ‘আমি খুব গরিব মানুষ। অনেক লড়াই সংগ্রাম করে জীবনটা গড়ে তুলতে ছিলাম, যা আজ মূল্যহীন। আজ ১৩ বছর (২০১৯ সাল পর্যন্ত) হলো আমি কারা অন্তরীণ আছি। ছয় বছর হলো হাইকোর্টের রায় বহাল হয়েছে। কীভাবে বেঁচে আছি তা লিখে বোঝাতে পারব না। এটাকে ঠিক বেঁচে থাকা বা জীবন বলে না।
‘এই জীবন আর সত্যিই আমার সহ্য হচ্ছে না। আপনি মহানুভব। দয়া করে আমাকে আপনার নিজ সন্তান মনে করে আমার জীবনটা বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন। ইতি স্বপন কুমার বিশ্বাস।’