নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডসের কারখানায় আগুনে নিহত ৫২ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সরকার ও মালিকপক্ষের কাছে এ দাবি জানান তিনি। পরে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন জাফরুল্লাহ।
সেখানে তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের চলমান রাখে, রাষ্ট্রকে ভালো রাখে, তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা না নিলে যা হয়, তাই হয়েছে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
‘সরকারের একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভাগ আছে, তাদের ইন্সপেক্টরদের প্রতিনিয়ত কলকারখানায় এসে দেখার কথা। তারা এখানে আসলে বুঝতে পারত কোথায় কোথায় গাফিলতি আছে। দুর্নীতির ফলে তারা আসেন না।’
সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে যেভাবে মৃত্যু ঘটছে, তাতে এই সরকারের ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ততা নাই। ন্যায়নীতি না থাকলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইন না মানলে এইসব দুর্ঘটনা থামবে না।’
নির্বাচিত সরকার না হলে জনগণের প্রতি সরকারের দায়-দায়িত্ব থাকে না উল্লেখ করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এখানে এসে সমস্ত এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। উনার ব্যর্থতায় এই অগ্নিকাণ্ড, সরকারের কেউ অনিয়ম করলে প্রধানমন্ত্রীর উপর দায় বর্তায়।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ ট্রাস্টি বলেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে দাবি করছি, যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা দিয়ে তো জীবনের ক্ষতিপূরণ হবে না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এই টাকাটা পেলে উপকৃত হবে।
‘যারা বেঁচে গেছেন তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে এবং তাদের পরিবারের মধ্যে থেকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। আহত শ্রমিকদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ দিতে হবে।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্র চিন্তার হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ফরিদ উদ্দিন, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লা, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, গণসংহতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক তরিকুল সুজন উপস্থিত ছিলেন।
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের জাতীয় সক্ষমতা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ার দরকার ছিল, যার মাধ্যমে সমস্ত কলকারখানা নিয়ম মেনে হবে এবং সেখানে যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
‘বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করল না। গার্মেন্টসের বাইরে এ দেশে যত কলকারখানা আছে সমস্ত কলকারখানা একই রকম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সেখানে যে কোনো মুহূর্তে আগুন, ভবন ধসসহ নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’