ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা রোগীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া টাকা আত্মসাৎ করে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলায় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও দুই সাংবাদিককে।
শনিবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর রাতেই এক নম্বর আসামি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদপত্র জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই মামলায় আসামি করা হয়েছে অনলাইন সংবাদপত্র নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের রহিম শুভ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটুকে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন তারাও।
বিস্ময়কর হলো, মামলার এজাহারেই হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কথাটি স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, লকডাউনের কারণে খাদ্য সরবরাহে দুই-এক দিন ‘সামান্য ব্যত্যয়’ হয়েছে।
আবার সংবাদটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, জনরোষ সৃষ্টিকারী মানহানিকর উল্লেখ করে এজাহারে এ-ও দাবি করা হয় যে, এই সংবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্য অসৎ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও সুনাম ক্ষুণ্ন করা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো অভিযোগও আনা হয় মামলায়।
এমন দুর্বল অভিযোগ থাকার পরেও তড়িঘড়ি করে আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার এক নম্বর আসামি থানায় এসেছিলেন। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রহিম শুভ (বায়ে), আব্দুল লতিফ লিটু (মাঝে) ও তানভীর হাসান তানু। ছবি: নিউজবাংলা
ঊর্ধ্বতন সেই কে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসামি থানায় আসার পর তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। আমি পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানিয়েছি। তার নির্দেশক্রমেই গ্রেপ্তার হয়েছে।’
গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো চাপ ছিল কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন। তিনি আসামিকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে আমি কিছু বলতে পারি না।’
সংবাদে যা বলা ছিল
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে ৬ জুলাই নিউজবাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার নিউজবাংলার প্রতিনিধিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আইসিটি ধারায় ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মামলা করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ চপল।
সংবাদে বলা ছিল, ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের খাবারের জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও, তাদের নিম্নমানের খাবার দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন রোগী ও তার স্বজনরা। তারা বলছেন, তিন বেলা যে খাবার তাদের দেয়া হচ্ছে, তার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হবে।
তাদের অভিযোগ, খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন ফল দেয়ার কথা থাকলেও তা তারা পাচ্ছেন না। নিম্নমানের খাবারের কারণে অনেকেই বাসা থেকে খাবার আনিয়ে খান। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে করোনা ইউনিটে আসা-যাওয়া করায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়েছে।
তাদের সকালের নাশতায় দেয়া হচ্ছে একটি পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকা দামের ডিম ও চার-পাঁচ টাকা দামের কলা।
দুপুরের ভাতের সঙ্গে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ দেয়া হয়। আর রাতে দেয়া হয় ভাত, এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম। বর্তমান বাজারদরে তিন বেলার এ খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৭০-৮০ টাকা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম চয়ন নিউজবাংলাকে সে সময় বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের সব ধরনের খাদ্য পাওয়ার কথা। আমি আপনার কাছে শুনলাম করোনা রোগীরা খাবার পায় না। খোঁজ নিয়ে আমি দ্রুত এর ব্যবস্থা নেব।’
সংবাদে মামলার বাদী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কেরও বক্তব্য দেয়া ছিল। তিনি সেদিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব। আর করোনা রোগীরা যাতে সঠিক মানের খাবার পায় সে ব্যবস্থা করব।’