বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আম্মুর লাশ পাইলেও শান্তি’

  •    
  • ১০ জুলাই, ২০২১ ২২:১৪

১৩ বছর বয়সী নাজমুল রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাজ করতো। একই ভবনের তৃতীয় তলায় কাজ করতেন তার মা। ঘটনার দিন সকাল ৮টায় মায়ের সঙ্গেই কাজে যায় নাজমুল। বিকাল ৪টায় কাজ শেষ হয়ে গেলে বাসায় চলে আসে। তবে মা নাজমা বেগম ওভারটাইম করবেন বলে ছেলের সঙ্গে ফিরতে পারেননি।

‘নমুনা দিছি আইজকে৷ ভাগ্যে থাকলে হয়ত আম্মুরে পামু। আম্মুরে পাইলেই যথেষ্ট। আম্মুরে জীবিত পামু না, এইটা আমি জানি। লাশটা পাইলে অন্তত শান্তি। আর কিছু দরকার নেই। আম্মুর লাশটা শুধু চাই।’

কথাগুলো বলতে বলতেই ঢাকা মেডিক্যালের মর্গের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নাজমুল হোসেন৷ তার মা নাজমা বেগম রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ। নাজমা বেগমের এক ছেল এক মেয়ে। ছোট বোন পাখিকে নিয়ে শনিবার মামা ও দুই খালার সঙ্গে ডিএনএ নমুনা দিতে আসেন নাজমুল। তার ছোট বোন পাখির বয়স পাঁচ বছর।

১৩ বছর বয়সী নাজমুল রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাজ করতো। একই ভবনের তৃতীয় তলায় কাজ করতেন তার মা। ঘটনার দিন সকাল ৮টায় মায়ের সঙ্গেই কাজে যায় নাজমুল। বিকাল ৪টায় কাজ শেষ হয়ে গেলে বাসায় চলে আসে। তবে মা নাজমা বেগম ওভারটাইম করবেন বলে ছেলের সঙ্গে ফিরতে পারেননি।

নাজমুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন ৪টায় আমার ছুটি হয়ে গেলে আমি আম্মুর সঙ্গে কথা বলতে তৃতীয় তলায় যাই। আম্মু ছিল না। কথা বলা হয়নি৷ আমি বাসায় চলে আসি।’

‘সন্ধ্যার দিকে একজন আমাকে বলে, সেজানে আগুন লাগছে। আমি দৌড়ে সেখানে যাই। বন্ধু বান্ধবের মোবাইল থেকে আম্মুরে অনেকবার ফোন দেই ৷ রিং বাজলেও ফোন রিসিভ হয় না৷ রাত ১টা পর্যন্ত ফোন ঢুকছে। এরপর মোবাইল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।’

নাজমুল বলেন, ‘আম্মুর সঙ্গে কাজ করা কয়েকজন জানে বেঁচে গেছে। তারা কইছে, তৃতীয়, চতুর্থ তলার সুপারভাইজাররা নাকি কইছিল, আগুন নিব্বে যাইতেছে, তোমরা কাম শুরু কর। তাদের ভিতরে ঢুকায় বাইরে তালা মেরে দিছে। এজন্য অনেক বাইর হইতে পারে নাই। না হলে আরও বহুত মানুষ বাইচ্চা যাইতো গা। আমার আম্মুও হয়ত আজ বাইচ্চা থাকতো। তাদের কারণে আমার আম্মু আর নাই।’

মর্গের সামনে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নাজমা বেগমের বড় বোন মমতাজ বেগম। তার আহাজারিতে নিরবতা নেমে আসে গোটা মর্গ প্রাঙ্গণ। চোখে পানি নিয়ে মমতাজ বেগম বলছেন, ‘বইনরে পাইতাছি না আজকে তিনদিন। ও বইন, তুমি কই, আহো তুমি। তোমার বাচ্চা দুইটা কানতাছে। এতো মানুষ দেহি, তোমারে ত দেহি না বইন। দয়া করো আল্লাহ, আমার বোনের লাশটা অন্তত ফিরাইয়া দেও। আমরা কিচ্ছু চাই না। বোনের লাশটা অন্তত দেন। শেষ বারের মতো বাচ্চারাও দেহুক, আমরাও বইনরে একটু দেহি।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। এর আগে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ আগুনে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

হাশেম ফুডস লিমিটেড সজিব গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। কারখানায় আগুনে প্রাণহানির ঘটনায় সজিব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশেমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

এ বিভাগের আরো খবর