বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিদর্শনে ঘরে অনিয়মের চিত্র উঠে আসছে কি?

  •    
  • ১০ জুলাই, ২০২১ ২২:০৫

মুন্সিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুটি এলাকার বদলে পরিদর্শক দল গেছে এমন একটি এলাকায়, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম। আর বগুড়া সদর উপজেলায় অনিয়মের কারণে সাতটি ঘর পুনর্নির্মাণ করতে হচ্ছে যেখানে, সেখানেও যায়নি দলটি।

উপহারের ঘরে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঁচটি দল যে পরিদর্শনে বেরিয়েছে, তাতে প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

এই প্রকল্পের প্রধান মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি বের হয়েছে, গত দুই দিনে সেটির যেখানে যেখানে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, যায়নি সব জায়গায়। আবার অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি যেসব এলাকায়, সেগুলোর বদলে অন্য এলাকা ঘুরেই কাজ শেষ করেছে তারা।

প্রথম দিন মুন্সিগঞ্জ আর দ্বিতীয় দিন বগুড়া সফরের চিত্র বলছে, ধসে পড়ার উপক্রম বা ফেটে যাওয়া সব ঘর দেখা হবে না তাদের।

মুন্সিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুটি এলাকার বদলে পরিদর্শক দল গেছে এমন একটি এলাকায়, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম। আর বগুড়ায় সদর উপজেলায় অনিয়মের কারণে সাতটি ঘর পুনর্নির্মাণ করতে হচ্ছে যেখানে, সেখানেও যায়নি দলটি।

নওগাঁয় মোট ১১টি উপজেলায় ঘর নির্মাণ করা হলেও পরিদর্শক দল গেছে মোট তিন উপজেলায়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। তবে বেশ কিছু ঘরের ভঙ্গুর দশার যে চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেটি ক্ষুব্ধ করেছে মানুষকে।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাও যে বিষয়টি পছন্দ করছেন না, সেটি কার কার্যালয়ের সিদ্ধান্তেই বোঝা যাচ্ছে। অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছে, তাদের পাঠানো হয়েছে জেলায় জেলায়।

কঠোরতার বার্তা নিয়ে শুক্রবার মুন্সিগঞ্জ দিয়ে শুরু এই পরিদর্শন। দলের প্রধান ‍উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন।

মুন্সিগঞ্জে এসে কয়েকটি ঘর পরিদর্শন করে তিনি জানালেন সরকারের মনোভাব। বলছেন, কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, স্বপ্নের প্রকল্প। একটা গরিব লোক যিনি ঘর পাচ্ছেন, এটা তার একটা স্বপ্নের সূচনা হয়। কাজেই এটা নিয়ে আমরা কোনো অবহেলা করব না এবং কোনো অবহেলা সহ্য করব না।’

প্রকল্প কর্মকর্তা এও বলে যান যে, ‘দলগুলোর পরিদর্শন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় যাবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এ কথাগুলো (অনিয়মের অভিযোগ) উঠছে যে এ কথাগুলো সঠিক কি না। সেটা যাচাইয়ের জন্য কমিটি করে তদন্ত করতে বলি।’

মুন্সিগঞ্জে ‘সময়ের অভাব’

মুন্সিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গজারিয়ার বালুয়াকান্দি ও সদর উপজেলার সিলই ইউনিয়নের কাজ নিয়ে।

বালুয়াকান্দিতে নদীর তীরে মাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো। মাটি সরে ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সেগুলো। এরই মধ্যে কয়েকটি পিলার ভেঙে গেছে।

সিলই ইউনিয়নের ৫০টি ঘরের মেঝে ফেটে গেছে এরই মধ্যে। ঘরগুলো যত উচ্চতায় নির্মাণের কথা ছিল, ততটা হয়নি।

তবে মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দলটি পরিদর্শন করেছে সদরের ভাষানচর এলাকা, যেখানে অভিযোগ তুলনামূলক কম।

কঠোরতার বার্তা দিয়ে গেলেও দলটির স্থান নির্বাচনের দুই ‘দুর্বলতা’ নিয়ে কথা হচ্ছে জেলায়।

প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি প্রকল্প পরিচালকের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পের অনিয়ম আড়াল করার চেষ্টা কি না।

বেশি অনিয়মের অভিযোগ যেখানে, পরিদর্শক দলকে সেখানে না নিয়ে ভাষানচরে আনার সিদ্ধান্ত কার- এই প্রশ্নে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপক কুমার রায় বলেন, ‘গণমাধ্যমে এই প্রকল্পটির বিষয়ই বেশি আসছে। তাই প্রকল্প পরিচালক মহোদয় বললেন, আমরা এটি দেখি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সিলই এবং ভাষানচর দুটির কথাই বলেছিলাম। ভাষানচর দেখার পর সময় আর হয়নি। কারণ স্যারের টাঙ্গাইল যেতে হবে, সেখানে প্রকল্প দেখবেন। এ জন্য সময় না থাকায় তিনি (প্রকল্প পরিচালক) চলে গিয়েছিলেন।’

দীপক বলেন, ‘স্যাররা কোনো দিকে যাবেন কি যাবেন না, তার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের ছিল না।

স্যারের দুই দিনের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও বগুড়া পরিদর্শনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওনাদের টিম করা আছে, টিম ঘুরে ঘুরে দেখবে।’

বগুড়ায় যাওয়ার কথা তিন উপজেলা, পরিদর্শক একটিতে

দ্বিতীয় দিন মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি যায় বগুড়ার শেরপুরে। সেখানে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে মোট ২২টি। তবে ভরাট করা মাটি সরে গিয়ে সাতটি ঘর আছে ঝুঁকিতে। এরই মধ্যে একটি ঘরের টয়লেট ধসে পড়েছে।

ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বগুড়া সদরেও। সেখানে দশটিকা এলাকায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ চলাকালেই গণমাধ্যমে বারবার প্রতিবেদন এসেছে অনিয়মের। সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মী বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছেন। আর ঘরগুলো উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেয়ার পর দেখা যায় সাতটি বসবাসের উপযোগী নয়। সেগুলো এখন পুনর্নির্মাণ চলছে।

শনিবার বগুড়ার শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পরিদর্শন করেছে পরিদর্শক দল

তবে এই এলাকায় যায়নি প্রতিনিধিদল। নন্দীগ্রামেও কয়েকটা ঘরে ফাটল দেখা গেছে, সেখানেও যায়নি তারা।

শাজাহানপুরে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে নিচু জমিতে। বৃষ্টিতেই চারপাশে থইথই পানি। বন্যার পানি এলে এগুলোতে থাকা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এখনই।

শেরপুরের ঘর পরিদর্শন শেষে মাহবুব হোসেন দাবি করেছেন, এখানে অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ-সহনীয় এসব ঘর অবহেলা ও অনিয়মের কারণে ভেঙে পড়েনি। ভূমিধসের কারণে পাকঘর ও টয়লেট ধসে পড়েছে। এগুলো টেকসই করতে আরসিসি পিলারও দিয়েও রক্ষা করা যায়নি।’

ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মোহন্ত জানান, শেরপুরের খানপুর ও সীমাবাড়ি পরিদর্শন শেষে ধুনট উপজেলায় দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে কর্মকর্তারা জেলা ছাড়েন।

অথচ দলটির যে সফরসূচি দেয়া হয়েছিল, তাতে জানানো হয়, মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দলটি মুন্সিগঞ্জ সফর শেষে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এবং বগুড়ার সদর, শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলো দেখতে যাবে।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুম আলী বেগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিডিউল ঢাকা থেকে সেট করা। তারা যেটা ভালো মনে করেছেন, সেখানে গিয়েছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর