করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে যখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ, সে সময় আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের তাদের কার্যালয়ে ডেকেছে।
শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া বিধিনিষেধ দিয়ে সরকার এবার বেশ কঠোর। ৯ দিনে কেবল ঢাকায় যৌক্তিক কারণ দেখাতে তা পারায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। আটকের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ঢাকার বাইরে এই সংখ্যাটি আরও বড়।
এর মধ্যে বার কাউন্সিল আইনজীবী নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষার জন্য তারিখ ঘোষণা করেছে আগামী ২৫ জুলাই। সে পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত হতে পারে কি না, এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে গতবার যারা পাস করতে পারেননি, তাদের এবারের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণের জন্য কাউন্সিলে ডাকা হয়েছে।
আর এ জন্য ১১ জুলাই থেকে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট, রেজিস্ট্রেশন শাখা এবং ডেসপাচ শাখাগুলো খোলা রাখার কথা জানানো হয়েছে।
করোনাকালে বার কাউন্সিলের নানা সিদ্ধান্ত নিয়েই পরীক্ষার্থীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তবে এবার গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় সশরীরে এসে কাগজপত্র জমা দেয়ার আদেশ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিস্ময়।
যাত্রী চলাচলে সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন এখন বন্ধ। ঢাকায় চলছে কেবল রিকশা। আর এই পরীক্ষার্থীরা সবাই যে ঢাকার এমন নয়। দূরের জেলা থেকেও আসতে হবে পরীক্ষার্থীদের। ঢাকায় থাকলে না হয় রিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে পুলিশের তল্লাশিচৌকি পেরিয়ে আসা যাবে, কিন্তু দূরের জেলার বাসিন্দারা কীভাবে আসবে, সেই প্রশ্নের জবাব নেই।
এই বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যে প্রশ্ন জেগেছে, তার জবাব জানতে গত দুই দিনে বার কাউন্সিলের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য নিতে পারেনি নিউজবাংলা। কেউই ফোন ধরেননি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সোহেল এই সময়ে এমন আদেশকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পঞ্চগড় থেকে একজন কীভাবে আসবে? সড়কে গাড়ি বন্ধ, লঞ্চ বন্ধ, ফেরি বন্ধ। এ অবস্থায় বার কাউন্সিল পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তো মনে হয় না।’
জড়ো হওয়া নিষেধ অথচ মৌখিক পরীক্ষার তারিখ
শাটডাউন শুরুর এক সপ্তাহ পর বার কাউন্সিল ৮ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, আইনজীবী নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা হবে ২৫ জুলাই থেকে।
আইনজীবী নিবন্ধনের পরীক্ষা বছরে দুটি হওয়ার কথা। কিন্তু সবশেষ পরীক্ষা হয়েছে ২০১৭ সালে। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ আছে। কারণ, পরীক্ষা ছাড়া আইন পেশায় যুক্ত হওয়া যায় না। কেবল অন্য আইনজীবীর সঙ্গে ‘শিক্ষানবিশ’ হিসেবে যুক্ত থাকা যায়। আর এ অবস্থায় আয়ের সুযোগ একেবারেই সীমিত। ‘সিনিয়র’ আইনজীবী তার ইচ্ছামাফিক যত টাকা দেন, তার ওপরই নির্ভর করতে হয়।
নিয়মিত পরীক্ষা না নিলেও এবার করোনাকালে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর পরিস্থিতির বিবেচনায় লিখিত না নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধন দিতে টানা কয়েক মাস আন্দোলন চলেছে। তবে সে দাবি মেনে নেয়নি বার কাউন্সিল।
তবে এবার সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হতে না হতেই মৌখিক পরীক্ষার তারিখ দেয়া হয়েছে।
এবার লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন ৫ হাজার ৪৬৬ জন। সেই সঙ্গে গত বছর মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করা আড়াই শ ছাত্রও পরীক্ষা দেবেন।
তারা নিশ্চিতভাবেই সবাই ঢাকায় থাকেন না। দেশের ৬৪ জেলা থেকেই আসতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
এরই মধ্যে এক সপ্তাহের শাটডাউন করা হয়েছে দুই সপ্তাহ। এটি আবার বাড়তে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় গঠন করা জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি কারফিউ দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে বলেও গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে।
এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ দেয়া এবং গত বছরে অনুত্তীর্ণদের বার কাউন্সিলের ডাকার যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে বার কাউন্সিলের সচিব রফিকুল ইসলামকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয়বার অংশ নেয়ার সুযোগ পান।
সে অনুসারে ২০১৭ সালের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়া ৩ হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবার লিখিত পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।
২০২০ সালে ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষানবিশ আইনজীবী নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে পাস করেন ৮ হাজার ৭৬৪ জন। তাদের সঙ্গে গতবার বাদ পড়াসহ মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় লিখিত পরীক্ষা হয়। ১৯ ডিসেম্বরের পরীক্ষায় পাঁচটি কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে সেগুলোতে পরীক্ষা স্থগিত হয়। পরে এই পরীক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় লিখিত পরীক্ষা দেন।
লিখিততে উত্তীর্ণরা এখন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এখানে পাস করলেই আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশাগত কাজ শুরু করবেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।