রূপগঞ্জের হাশেম ফুড লিমিটেড কারখানায় আগুন লাগার পর ২৮ ঘণ্টা পার হলেও বিভিন্ন জায়গা জ্বলছে। তবে ফায়ার সাভিস বলছে আগুনগুলো ছোট এবং সেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
সর্বশেষ রাত ১০টা পর্যন্ত ভবনটি চার, পাঁচ ও ষষ্ঠ তলায় বিভিন্ন অংশে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৫টা ৪২ মিনিটে খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘এখনও কিছু জায়গায় ছোট ছোট আগুন রয়েছে। জিনিসপত্রের স্তূপ সরাতে গিয়ে কিছু জায়গায় আগুন পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এর আগে ফায়ারের মহাপরিচালক ছয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর পরিদর্শন করে আসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ না হওয়ায় এখনও কেউ আটকে আছে কিনা বলা যাচ্ছে না। নির্বাপণ শেষে প্রত্যেকটি ফ্লোর সার্চ করা হবে।’
শনিবার অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
রাতে মোট তিন জনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। তবে শুক্রবার কারখানা থেকে বের করা হয় আরও ৫২ জনের মরদেহ। এদের কাউকে চেনা যায় না। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় এখন ৫১ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থা হিসাব করেছে।
কারখানাটিতে পাঁচ থেকে সাতশ শ্রমিক কাজ করত বলে তথ্য মিলেছে। তবে দুর্ঘটনার সময় মোট কত জন সেখানে ছিল, সেটি নিশ্চিত করে কেউ বলছে না। কারখানার মালিক দুর্ঘটনার পর আর সেখানে যাননি।
আগুন নেভাতে এত সময় কেন
প্লাস্টিক দানা, বোতল, কর্ক, পলিথিন, কার্টন, মবিল ও কেমিক্যাল ভর্তি ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডের কারখানাটি। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের বেগ পেতে হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কেমিক্যালের ড্রাম, কনটেইনার ও প্লাস্টিকের বোতল।
কারখানাটিতে জুস, লাচ্ছি, সেমাইসহ বিভিন্ন পণ্য বোতলজাত ও প্যাকেজিং করা হতো। এসব পণ্যের গায়ে লেবেল লাগানো হতো, পলি করা হতো। প্যাকেট করা হতো কারখানার ভেতরে।
ছয়তলা ভবনটিতে সজীব গ্রুপের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন হতো।
কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিচতলায় বিভিন্ন পণ্যের কার্টন রাখা হতো। এক পাশে ছিল নুডলস ও মেকারনি তৈরির সেকশন। দ্বিতীয় তলায় টোস্ট, বিস্কুটসহ বিভিন্ন বেকারিপণ্য তৈরির কাজ চলত। তৃতীয় তলায় ছিল লাচ্ছা সেমাই ও বিভিন্ন জুস তৈরির মেশিন। চতুর্থ তলায় চকলেট, ললিপপ ও চকোচকোসহ আরও কয়েকটি খাদ্যপণ্য তৈরির মেশিন।
পঞ্চম তলায় চানাচুর ও ষষ্ঠ তলায় ছিল গুদাম। এ ছাড়া ছয়তলা ভবনের ছাদের একটি অংশে ছিল আরও একটি গুদাম।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আগুনের কারণ অনুসন্ধানে তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।