নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যে কারখানাটিতে আগুনে অসংখ্য প্রাণ ঝলসে গেছে, সেই ভবনটির চারপাশে দিনভর ছিল কান্না আর আহাজারি। শত শত মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে ছিল তাদের প্রিয়জনের অপেক্ষায়।
৫২ জনের মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য মিলেছে, কিন্তু কত জনের খোঁজ নেই, সেটি নিশ্চিত নয় এখনও। এর মধ্যে একটি বেসরকারি সংস্থা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে একটি তালিকা করেছে, যাতে ৫১ জনের নাম রয়েছে।
তবে নিখোঁজ এই ৫১ জনই নাকি আরও নাম আছে, সেটি নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো সূত্র নেই।
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে না তাদের কত জন শ্রমিক ছিল, কতজন উপস্থিত ছিল দুর্ঘটনার আগে। ফায়ার সার্ভিসও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেই তালিকা
১. মহিউদ্দিন, পিতা: গোলাম
২. মো: শামীম, পিতা: ফখরুল ইসলাম
৩. হাফেজা, পিতা: ইসমাইল
৪. ফিরোজা বেগম, পিতা: হাকিম আলী
৫. নাঈম, পিতা: তাহের উদ্দিন
৬. শাহিদা, পিতা: স্বপন
৭. কল্পনা বর্মন, পরশ বর্মন
৮. মো. রাকিব (২), পিতা: তাইজউদ্দিন
৯. খাদিজা, পিতা: কাইয়ুম
১০. শান্তা মনি, পিতা: জাকির হোসেন
১১. উমিতা বেগম, স্বামী: সেলিম
১২. আকিমা, পিতা: কাইয়ুম
১৩. হিমা, পিতা: করিব হোসেন
১৪. স্বপন, পিতা: মনশের
১৫. শাহানা, স্বামী: মাতাবউদ্দিন
১৬. আমেনা, স্বামী: রাজিব
১৭. মিনা খাতুন, পিতা: আব্দুর রশিদ
১৮. নাজমা আক্তার, পিতা: সুজন
১৯. পারভেজ, পিতা: আসান উল্লাহ মিজি
২০. মাহাবুব, পিতা: মো. গফুর
২১. মো. রিপন মিয়অ (ইয়ামিন), পিতা: সেলিম মিয়া
২২. মো. নোমান মিয়া, পিতা: মান্নান মাতাব্বর
২৩. নাজমা বেগম, স্বামী: আফজাল
২৪. মোহাম্মদ আলী, পিতা: শাহাদাৎ খান
২৫. মো. হাসনাইন, পিতা: ফজলু
২৬. মো. জিহাদ রানা, পিতা: মো: শওকত
২৭. সেলিনা, পিতা: মো: সেলিম
২৮. ফিরোজা, মেয়ে: সুমাইয়া
২৯. রিমা, স্বামী: জসিম উদ্দিন
৩০. মো: রাকিব, পিতা: কবির
৩১. ফারজানা, পিতা: সরুজ আলী
৩২. নাজমুল, পিতা: জান মিয়া
৩৩. তাসলিমা, পিতা: বাচ্চু মিয়া
৩৪. মো: রাকিব, পিতা: নাম জানা যায়নি।
৩৫. মো: আকাশ, পিতা: বাহার
৩৬. রাশেদ, পিতা: আবুল কাশেম
৩৭. বাদশা, পিতা: এনায়েত
৩৮. ইউসুফ, পিতা: নাম জানা যায়নি।
৩৯. জিহাদ, পিতা: আবুল বাসার
৪০. সাকিল, পিতা: নাম জানা যায়নি।
৪১. জাহানারা, স্বামী: খোকন
৪২. সালমা, পিতা: বাচ্চু মিয়া
৪৩. মোছা: রহিমা, পিতা: আজিজুল হক
৪৪. রাবেয়া, পিতা: ছান্দু মিয়া
৪৫. মাহমুদা, পিতা: মালেক
৪৭. তাকিয়া আকতার, পিতা: আজমত আলি
৪৮. তুলি, পিতা: আ: মান্নান
৪৯. শাহানা, পিতা: নিজাম উদ্দিন
৫০. সাজ্জাদ হোসেন সজীব, পিতা: ফয়জুল ইসলাম
৫১. লাবণ্য আক্তার, পিতা: লালচু মিয়া
যেভাবে প্রাণহানি
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
শুক্রবার রাত নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে বৃহস্পতিবার দুজনের মৃত্যু হয়। একজনের মৃত্যু হয় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৫২।
রূপগঞ্জের কারখানার আগুনে ৫২ জনের মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য মিলেছে, কিন্তু কত জনের খোঁজ নেই, সেটি নিশ্চিত নয় এখনও। ছবি: নিউজবাংলা
কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিক কিশোর ফাতেমা জানিয়েছে, সে তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। আর চতুর্থ তলায় তালা দিয়ে রাখার কারণে অন্যরা বাঁচতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে। বাহিনীটি জানায়, চারতলার সিঁড়ির মুখ থেকে ৪০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেজান জুস কারখানার সাততলা ভবনটির নিচতলায় কার্টন ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনের লেলিহান শিখা একপর্যায়ে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।