নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুনের ঘটনায় সরকারের কোনো সংস্থা বা মালিকপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।
শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এও বলেন, ‘রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে দেয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত। নিচতলায় লাগা আগুন ছড়িয়ে পড়ে সাততলা ভবনের পুরোটিতে। এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। আরও ৫১ জন শ্রমিকের খোঁজ না পাওয়ার কথা জানাচ্ছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, কারাখানা কর্তৃপক্ষ তালা দিয়ে রাখায় তাদের সহকর্মীরা কারখানা থেকে বের হতে পারেননি। আর দুর্ঘটনার পর মালিক এখনও ঘটনাস্থলে যাননি।
আগুন লাগার পর তিন তলা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়া ফাতেমা নামে এক কিশোরী শ্রমিক গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানায়, তালা দেয়ার কারণে তার সহকর্মীরা বাঁচতে পারেনি।
তার বর্ণনা ছিল এমন, ‘আমি আমার বইনের খোঁজ নিছি। তারপরে শুনি, চাইরতলায় নাকি এসি রুমের ভিতরে তালা লাগায়া রাখছে। অনেক মানুষে বলছে তালাটা খোলো। তালা খোলে নাই। মালিকে নাকি কেডা নাকি অর্ডার দিছে তালা লাগায়া রাখতে।
কারখানার সামনে এক স্বজনের আহাজারি‘তহন খোঁজ নিছি, এসি রুমের ভিতরে কে কে আছে। তহন হেরা সান্ত্বনা দেয় যে, এসি রুমের ভিতরে মানুষ বাইচ্যা আছে। কিন্তু হেরা বলে নাই যে, এটি রুম কি পুরা প্লট জ্বইল্যা গেছে। হেরা কোনো ব্যবস্থা করে নাই। একট কিছু করে নাই।’
ফাতেমার চেহারাতেই স্পষ্ট যে কারখানাটি শিশু শ্রমিকদেরকে নিয়োগ করেছিল। অথচ এটি আইনে স্পষ্টত নিষেধ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই কারখানায় শিশু শ্রমিক কর্মরত থাকলে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগুনে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে সকল শ্রমিক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন তাদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে।’
হাশেম ফুডস লিমিটেডের মালিক মো. আবুল হাসেমপ্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের কল্যাণে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটি ওই বছরের ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়। তবে আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও বাধ্যবাধকতার অভাবে যথাযথভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
২০১৩ সালে আবারও সংশোধন করে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইনটি পাস হয়। ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আইনটির একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।
এই আইনের ১৪ (১) ধারা অনুযায়ী, ফাউন্ডেশনের একটি তহবিল গঠন করা হয়। সরকার এবং মালিকদের অনুদান থেকে পাওয়া অর্থ তহবিলে জমা হয়।
পুড়ে যাওয়া শ্রমিকদের মরদেহ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গেআগুন লাগার পর পরই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ দুর্ঘটনায় হতাহতের খোঁজ এবং হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসায় খোঁজ রাখার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম ব্যাপারী।