নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় লাগা আগুনের কবল থেকে যারা বেঁচে যায়, তাদের একজন কিশোরী ফাতেমা। সে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়।
ঘটনাস্থলে গবেষক মাহতাব উদ্দিন আহমেদের কাছে বৃহস্পতিবারের সেই বর্ণনা দেন সে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
সেখানে ফাতেমা বলে, ‘আমরা তিনতলায় আমগো দুই জন মেয়ে দিছে বোতল লিক করার জন্য। আমরা বোতল লিক করতাছি, আগুন লাগছে। কোন সেকশনে জানাজানি হয় নাই। তখন আমরা বইসা আছি। পিছন দিকে তাকায়া আমার সাথেরজন দেখে আগুন লাগছে।
‘কোনো নিশ্বাস নেয়া যায় না। আর ধোঁয়া। কোনো কিছু দেয় না, একটা দড়িও দেয় না নামার জন্য। একটা মইও দেয় না, নামব মানুষ। তহন আমগো নিঃশ্বাস যহন বন্ধ হয়্যা গেছে, তখন অনেকে লাফ দিছে, লাফ দিয়া মইরা গেছে।
‘তখন আমি বললাম যে, মরলে নিচে গিয়া মরব। ওপরে তো নিঃশ্বাস দিতে পারতেছি না। তখন আমি লাফ দিছি, ডেনিসের ওপর পইরা অনেক ব্যাথা পাইলাম। আমার সাথে যে, হে ১০ মিনিট পর লাফ দিছে। হের সারা শইল লাল হয়া গেছে গা।
‘আমি কিচ্ছু বলতে পারি না। আমি আমার বইনের খোঁজ নিছি। তারপরে শুনি, চাইরতলায় নাকি এসি রুমের ভিতরে তালা লাগায়া রাখছে। অনেক মানুষে বলছে তালাটা খোলো। তালা খোলে নাই। মালিকে নাকি কেডা নাকি অর্ডার দিছে তালা লাগায়া রাখতে।
‘তহন খোঁজ নিছি, এসি রুমের ভিতরে কে কে আছে। তহন হেরা সান্ত্বনা দেয় যে, এসি রুমের ভিতরে মানুষ বাইচ্যা আছে। কিন্তু হেরা বলে নাই যে, এটি রুম কি পুরা প্লট জ্বইল্যা গেছে। হেরা কোনো ব্যবস্থা করে নাই। একট কিছু করে নাই।
আগুন লাগার খবরে কারখানা এলাকায় ভিড় করেন অনেকে
‘ছাদেত্তে অনেক লোক লাফ দিয়া মরছে। কিন্তু হেরা কিচ্ছু দেয় নাই। একটা দড়ি পর্যন্ত দেয় নাই যে আমরা ধইরা নামব।
‘সাধারণ একটা দড়ি দিছে, অনেকে নামতেই পইড়া গেছে। হেরাও অনেকে মারা গেছে।
‘কিন্তু এসি রুমের ভিতরে যারা আছিল, হেরা বলছে, তালাডা খুইল্যা দিতে। হেরা তালা খুলে দেয় নাই। পুরা প্লট যহন জ্বইলা গেছে, তহন কি আর এসি রুমের ভিতরে মানুষ থাকব? হেরা মারা গেছে।
‘আমাদের সাথে যারা লাফ দিছে, আমগো সেকশনের একটা পুলা পইড়া মারা গেছে, একটা মহিলা পইড়া মারা গেছে। আরও ছয়/সাত জন মারা গেছে।
‘আরও অনেক লোক ছাদের ওপরে মারা গেছে। কিন্তু ওদের কথা বলে নাই।’