প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আগরতলা থেকে আসছে বিখ্যাত রানি জাতের ৪০০টি আনারস। প্রতি প্যাকেটে চারটি করে ১০০ প্যাকেটে এই আনারসের চালান ঢাকায় আসবে শনিবার। যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবে রোববার।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের ‘রিটার্ন গিফট’ হিসাবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যে রানি জাতের আনারসের ৬৫০ কেজির চালান পাঠাচ্ছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শনিবার আখাউড়া বন্দর দিয়ে আনারসের চালানটি ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে পাঠানো হবে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী কার্যালয়ের বরাত দিয়ে শুক্রবার হিন্দুস্তান টাইমস জানায় ‘ত্রিপুরা টু সেন্ড ৬৫০ কেজিস অব পাইনাপ্যল টু বাংলাদেশ পিএম অ্যাজ রিটার্ন গিফ্ট ফর ম্যাঙ্গোস’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বৃহত্তর জেলা কুমিল্লার সীমান্তবর্তী গোমতী জেলার গ্রাম আম্পি থেকে ৬৫০ কেজিরও বেশি আনারস আনা হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে চারটি করে মোট ১০০টি প্যাকেটে আনারসগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয় এবং তা থেকে ১ দশমিক ২২ লাখ মেট্রিক টন ফলন হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ২০১৮ সালে আগরতলা সফরে এসে ‘রানি জাতের’ এই আনারস খেয়েছিলেন। তৃপ্ত হয়ে তিনি সেই আনারসকে রাজ্যের ফল হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।
গত ৪ জুলাই রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা জাতের ২ হাজার ৬০০ কেজি আম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরাও আম প্রাপকদের তালিকায় ছিলেন। এরমধ্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব পেয়েছিলেন ৩০০ কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম।
আম পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লেখেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন, এই উপহারের আমে তার হৃদয় ছুয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ৬ জুলাই হাসিনাকে চিঠি লেখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, দিদির আমে তিনি আপ্লুত।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা চিঠি দিয়ে শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানালেও সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো আম পেয়ে ধন্যবাদ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: দ্য হিন্দু
৫ জুলাই আম পেয়েই তিনি ঘোষণা করেন, হাড়িভাঙ্গার ফিরতি গিফট হিসেবে ত্রিপুরার সেরা ‘রানি জাতের আনারস পাঠাবেন প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
উল্লেখ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সুস্বাদু আম উপহারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এবার বেড়েছে পরিসর। শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নয়, বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে আম পাঠিয়েছেন তিনি।
আম কূটনীতির পেছনে সরকার কেবল কূটনৈতিক রীতিই নয়, বাংলাদেশের রসালো ফল-ফসলের রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভাগ্যবান। এ বছর আমাদের আম খুব ভালো হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা উন্নত মানের আম। কিন্তু এর পরিচিতি কম।
‘আর এ বছর আমাদের জন্য উল্লেখযোগ্য বছর। কারণ এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ পালন করেছি। এ মহামারির মধ্যে অনেক দেশের বন্ধুরা এসেছেন এবং অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
আমরা তাদের উপহার হিসেবে আম পাঠিয়েছি। আমাদের আনন্দ তাদের সঙ্গে ভাগ করেছি। এতে সম্পর্ক উন্নত হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ছাড়াও কয়েকটি দেশে আমরা আম পাঠিয়েছি। বিশেষ করে যেসব দেশে আমাদের অনেক প্রবাসী ভাই-বোন থাকেন। যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য রয়েছে। এতো ভালো আম আমাদের, কিন্তু তারা আমাদের দেশ থেকে আম নেয় না।
‘এখন তাদের দিয়েছি, তারা খেয়ে দেখুক। ভালো মনে করলে আমাদের কাছ থেকে কিনবে। আমাদের তো অনেক আম আছে, আমের অভাব নেই।
‘কূটনৈতিক আচারে উপহার পাঠানোর রীতি আছে। এবার আমাদের ফল-ফসল পাঠাচ্ছি। আমরা আগেও অন্যদের আম দিয়েছি। নরেন্দ্র মোদি এ আম পেয়ে চিঠি লিখেছেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়ে আনারস পাঠাতে চেয়েছেন। আমরাও খুশি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমের মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের আম উপহার দিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেও আম উপহার পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার বাইরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে আম উপহার পাঠান শেখ হাসিনা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকেও আম পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের শীর্ষ নেতাদের জন্য ২ হাজার ৬০০ কেজি আম পাঠানো হয়।
এ ছাড়া ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আম গেছে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে। তামাবিল সীমান্ত দিয়ে আম গেছে আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক, প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের কাছেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আম পাঠানো হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, জর্ডান ও কুয়েতে বাংলাদেশের আম গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের আমের মধ্যে রয়েছে প্রধানত হাঁড়িভাঙ্গা আম। রংপুর এলাকার এ আম বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাদের জন্যে পাঠানো হয়।
রংপুর অঞ্চলের আম হওয়ায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই জাতের আমকে ‘প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির আম’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে হিমসাগর, ফজলি ও ল্যাংড়া আমও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় রয়েছে।