নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের যে ফ্যাক্টরি থেকে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই ভবন পরিদর্শন শেষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে জানিয়েছে, ভবনটির ছাদে ওঠার সিঁড়ি নেট দিয়ে বন্ধ ছিল। নেট থাকায় ছাদে উঠতে পারেননি শ্রমিকরা। যে কারণে আগুনে মৃত্যু বেড়েছে।
রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) বৃহস্পতিবার পৌনে ছয়টার দিকে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। রাতেই তিন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সকালে কারখানার ভেতর থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে আরও লাশ।
পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কি না, কারখানা পরিচালনার জন্য যা যা করণীয় তা অনুসরণ করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস আমাদের এমনটিই জানিয়েছে।’
মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে নথিপত্র ঠিক আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এখানে আমিসহ আমার দপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই আছেন। পুরো ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখব। জেলা প্রশাসন থেকে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। আমাদের দপ্তর থেকেই তদন্ত করা হবে।’
নিখোঁজদের মরদেহের সন্ধানে মর্গের সামনে ছবি হাতে স্বজনদের অপেক্ষা। ছবি: নিউজবাংলা
উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের মুস্তাফিজুর রহমান জানান, চারতলার সিঁড়ির মুখ থেকে ৪০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের দপ্তর থেকে সেফটি বিষয়টি তদন্ত করছি। ডিআইজি সেফটিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।’
আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানার ভেতরের অংশ। ছবি: নিউজবাংলা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক আব্দুলাহ আল মামুন বলেছেন, এই অগ্নিকাণ্ড যাদের অবহেলায় হয়েছে, তাদের নাম তদন্তে বেরিয়ে আসবে। জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে। তারা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবেন।
উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে র্যাব রয়েছে বলে জানান বাহিনীটির মহাপরিচালক।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বেশির ভাগ মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে ভবনের চারতলা থেকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়নি। সেসব তলায় অভিযানের পর মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো যাবে।