চারপাশে আগুন, কালো ধোঁয়া। দেখা যাচ্ছে না কিছুই। বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তার মুখে স্বজনের কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিলেন এক শ্রমিক।
ভাইকে ফোনে বললেন, ‘ভাই, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি আমাকে মাফ করে দিও। আমার চারপাশে আগুন। আমি কিছু দেখতে পারছি না। আমার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই।’
সেই ভাই মোহাম্মদ আলীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে খুঁজতে এসেছেন টিপু সুলতান। মোহাম্মদ আলী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ।
মোহাম্মদ আলী ওই কারখানা ভবনের চারতলায় চকলেট ফ্যাক্টরির অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। টিপু সুলতানের সঙ্গে তার মেজো ভাই মোহাম্মদ আলীর সর্বশেষ কথা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে।
টিপু সুলতান বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় আমার মেজো ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা হয়। এ সময় আমার ভাই আমাকে ফোনে বলে, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি আমাকে মাফ করে দিও…আমার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই’।”
মেজো ভাইয়ের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপু সুলতান।
কান্না জড়ানো গলায় টিপু বলেন, ‘আমি ভাইকে বলি, তোমার কী অবস্থা? আমার ভাই বলে, চারপাশে আগুন। ছাদে বা জানালার পাশে যাওয়ার উপায় নাই।’
টিপু সুলতানের মতো আরও অনেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছেন স্বজনদের খোঁজে।
রূপগঞ্জে কার্টন কারখানার আগুনে পুড়ে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন জানান, এরই মধ্যে পুড়ে মারা যাওয়া ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
দেবাশীষ জানান, বেশির ভাগ মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে ভবনের চারতলা থেকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়নি। সেসব তলায় অভিযানের পর মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো যাবে।
তিনি আরও জানান, জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। তাদের বেশির ভাগ ভবনের ছাদে উঠে যান।
ভবনটিতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
আগুনে বৃহস্পতিবার দুজনের মৃত্যু হয়। একজনের মৃত্যু হয় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৫২।
রূপগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম ব্যাপারী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আমাকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আমরা কাজ করছি। সাত দিনের মধ্যে আমরা রিপোর্ট দিয়ে দেব।
‘আমরা মাত্রই ঘটনাস্থল থেকে এলাম। এখনও সেখানে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৩৫ হাজার স্কয়ার ফুট। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। তারাই আগুন লাগার কারণ জানাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ঢামেক মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তর করা হবে। রূপগঞ্জে লাশের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং স্বজনরা মর্গে এসে স্বজনের নাম তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত প্রক্রিয়া শুরু করবেন।’