‘আর কিছু চাই না। কেবল আমাদের লাশটা চাই। লাশটা দেন।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ ভাগনে হাসনাইনের খোঁজে এসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে এভাবেই আকুতি জানান খালা লাইজু।
তিনি জানান, হাসনাইনের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় কাজ করতে ঢাকায় এসেছিল ১২ বছরের হাসনাইন।
মাত্র দেড় মাস আগে ওই জুস কারখানায় কাজ নেয় সে। বেতন ছিল ৮ হাজার টাকা। থাকত তারাবোতে।
খালা লাইজু আরও জানান, হাসনাইন ঢাকায় এসেছিল চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে। রাকিব ওই কারখানায় চার বছর ধরে চাকরি করত। আগুনের পর সেও নিখোঁজ রয়েছে।
হাসনাইনের চাচা কবির হোসেনও নিখোঁজ ছেলে রাকিবের ছবি নিয়ে এসেছেন মর্গের সামনে। তারও একটাই আকুতি, অন্তত ছেলে ও ভাতিজার মরদেহটা যেন পান।
তিনি জানান, রোজার ঈদের ছুটিতে রাকিব বাড়ি গেলে হাসনাইন তার সঙ্গে ঢাকা আসে। স্কুল খুললে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার পর থেকে ছেলে ও ভাতিজার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা ঢামেক হাসপাতালের মর্গে এসেছেন।
রূপগঞ্জের ওই কারখানার আগুনে পুড়ে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীটির ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে পুড়ে মারা যাওয়া ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ইউনিটের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে।
দেবাশীষ জানান, বেশির ভাগ মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে ভবনের চারতলা থেকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়নি। সেসব তলায় অভিযানের পর মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো যাবে।
তিনি আরও জানান, জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। তাদের বেশির ভাগ ভবনের ছাদে উঠে যান।
ভবনটিতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
আগুনে বৃহস্পতিবার দুজনের মৃত্যু হয়। একজনের মৃত্যু হয় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৫২।