রূপগঞ্জে কার্টন কারখানার আগুনে ৫২ মৃত্যুর ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম ব্যাপারী।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে শুক্রবার এ কথা জানান তিনি।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুভাষ চন্দ্র সাহা।
শামিম ব্যাপারী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আমাকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আমরা কাজ করছি। সাত দিনের মধ্যে আমরা রিপোর্ট দিয়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, গতকালকে সেখানে দুটি মরদেহ ছিল। আর আজকে ঢামেকের মর্গে ৪৯টি মরদেহ আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মরদেহ হস্তান্তর করবে।
‘মরদেহ হস্তান্তর করার সময় তাদের স্বজনদের বিধি মোতাবেক ২৫ হাজার টাকা দেয়া হবে৷ আহতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের ১০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসক মহোদয় অর্থ সহায়তা দেবেন।’
রূপগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্রই ঘটনাস্থল থেকে আসলাম। এখনও সেখানে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৩৫ হাজার স্কয়ার ফুট। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। তারাই আগুন লাগার কারণ জানাবে।
‘ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ঢামেক মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তর করা হবে। রূপগঞ্জে লাশের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং স্বজনরা মর্গে এসে স্বজনের নাম তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত প্রক্রিয়া শুরু করবেন।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘৪৯টি মরদেহ আনা হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজ হবে মরদেহগুলোর ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা। এসব মরদেহের অনেকটাই আগুনে পোড়া।
‘আমরা তাদের ডিএনএ স্যাম্পলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করব৷ পরবর্তীতে তাদের নিকটাত্মীয় যারা থাকেন তাদের প্রোফাইল ম্যাচিং করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হবে। এখনও পর্যন্ত কোনো ভিকটিমের পরিবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। উনাদের তথ্য অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।’
রূপগঞ্জে কার্টন কারখানার আগুনে পুড়ে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে পুড়ে মারা যাওয়া ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ইউনিটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
দেবাশীষ জানান, বেশির ভাগ মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে ভবনের চারতলা থেকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়নি। সেসব তলায় অভিযানের পর মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো যাবে।
তিনি আরও জানান, জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। তাদের বেশির ভাগ ভবনের ছাদে উঠে যান।
ভবনটিতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, এসব পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
আগুনে বৃহস্পতিবার দুজনের মৃত্যু হয়। একজনের মৃত্যু হয় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৫২।