নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি কার্টন তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে অর্ধশতাধিক মৃত্যু হয়েছে। হতাহত বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে কারখানার কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপসহকারী পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘ভবনের চারতলায় কলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল। ফলে কেউ সেখান থেকে বেরোতে পারেননি। মরদেহ বেশির ভাগই পাওয়া গেছে চারতলায়।’
তিনি বলেন, ‘সাততলা ভবনটির নিচতলায় ছিল কার্টন তৈরির কারখানা। সেখানেই প্রথমে আগুন লাগে। বের হতে অনেকেই গেটের কাছে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পান।
‘এরপর শ্রমিকরা ভবনের ওপরে উঠে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ দেখতে পান। ফ্লোর ও ছাদের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ না থাকলে এত হতাহত হতো না।’
এমন অবস্থার পরও কেন তালাবদ্ধ ছিল, এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সেটা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
কারখানার শ্রমিকরা জানান, প্রতি তলায় একটি করে সেকশন রয়েছে। সেখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট রয়েছে। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ হয় কারখানায়। যখন শ্রমিকরা প্রবেশ করে এবং শিফট শেষে বের হয় তখন গেট খোলা হয়। নিচতলায় আগুন লাগলে সে খবর ওপরে দেয়াই হয়নি। আর দ্রুত আগুন গোটা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নেভাতে অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ শুরু করে।
লাশ উদ্ধারের পর সেগুলো ঢাকা মেডিক্যালে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সাইফুল ইসলামদীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরোপুরি আগুন নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন নেভাতে না পারায় কারখানার পাশে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষও হয়।
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারখানা থেকে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মরদেহের বেশির ভাগই ভবনের চারতলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনো উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যায়নি।
‘ওই দুই তলায় উদ্ধারকাজ শেষ করার পর হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো যাবে।’
উদ্ধার মরদেহগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহগুলোর অবস্থা একেবারে খারাপ থাকায় সেগুলো স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এখন ডিএনএসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তি আছে, সেগুলোর মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’
বৃহস্পতিবার আগুনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একজন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হন। শুক্রবার দুপুরে ৪৯ জনসহ কারখানাটিতে আগুনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।