বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে বেড়ে চলছে বৃষ্টির পরিমাণ। আবহাওয়া অফিস বলছে, পুরো জুলাইয়ে দেশজুড়ে বাড়তে থাকবে বৃষ্টির ধারা। এতে সৃষ্টি হতে পারে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি।
বর্ষাকালের প্রথম ধাপে জুনে দেশে বৃষ্টি হয়েছে গড়ে ৫১৭.৯ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জুন মাসজুড়ে এবার যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে জুলাই মাসেও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত এটা প্রতিবছর হয়ে থাকে। জুলাই মাসেও একই ধারা অব্যাহত থাকবে। সারা মাসজুড়েই বৃষ্টি হবে। এতে বন্যা হতে পারে।
জুন মাসের এই বৃষ্টি কয়েক বছরের মধ্যে বেশি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এমন না। তবে যদি দুই এক বছরের কথা বলা হয় তবে একটু বেশি হয়েছে।
জুলাইয়ে যেমন থাকবে আবহাওয়া
জুনের বৃষ্টির ধারা জুলাইতেও অব্যাহত থাকবে তা মাসের প্রথম দিন থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। কেননা মৌসুমি বায়ু আছে খুবই সক্রিয় অবস্থায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জুলাইয়ের দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে এক-দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে ভারি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্য এবং মধ্যাঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কিছু জায়গায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
টানা বর্ষণে জুলাইয়ে দেশের কোথাও কোথাও সৃষ্টি হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি-নিউজবাংলা
কেমন ছিল জুন মাস
প্রতি বছর জুনের মাঝামাঝিতে দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে, বিশ্বজুড়ে যেটি ‘মনসুন’ নামে পরিচিত। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে এটি ত্বরান্বিত হয়েছে। আগেভাগেই দেশে ঢুকছে বৃষ্টিসমৃদ্ধ এই বায়ু।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছিল, জুনে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে। সেটি গড়ে ৪৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। হয়েছে এর চেয়ে বেশি, গড়ে ৫১৭.৯ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুন মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি ১৭.৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে সিলেট রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
জুন মাসের ৩০ তারিখ একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়, ২১৬ মিলিমিটার চট্টগ্রামে।
বৃষ্টির মৌসুমেও জুনে তাপপ্রবাহও দেখেছে দেশ। ৪ থেকে ৭ জুন খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ (৩৬-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে।
জুনে মাস ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২৬.২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩০.৭ শতাংশ, রাজশাহী ২৪.৪ শতাংশ, খুলনাতে ৩২.৫ শতাংশ, বরিশালে ১১.৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। ভিন্ন চিত্র দেখা যায় সিলেট ও রংপুরে। বিভাগ দুটিতে যথাক্রমে ২৯.৩ ও ১৯.৯ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম।