বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেগা প্রকল্পের টাকায় টিকা কিনুন

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২১ ১৮:৪৩

‘বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই। কোভিড-১৯ অতিমারীর শুরু থেকে সরকারের রাখঢাক, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দুর্নীতি জনগণকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে, সরকার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।’

করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতা প্রতিরোধে মেগা প্রকল্পসমূহের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে অতিদ্রুত সরকারকে টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে গিয়ে সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ‘করোনার ভাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটি’র আহ্বায়ক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ সংকটকে জাতীয় পর্যায় এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। টিকা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দরকার হলে অন্যখাত থেকে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পে বরাদ্ধ ডাইভার্ট করে এ খাতে কাজে লাগাতে হবে। এটা অতি জরুরি।’

‘বিশ্বের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি থেকে টিকা সংগ্রহ করা দরকার। অতি শিগগরিই। এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ নয়, কোটি কোটি টিকা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে করোনা ৪/৬ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘টিকা ক্রয় আমরা বিরোধী দল করতে পারব না, এটা সরকারকেই করতে হবে। যদি সরকার না পারে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সেই দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকারকে প্রয়োজনে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা পারবে তারা এদেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে।’

‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চিয়তা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতায় বিএনপি উদ্বেগ প্রকাশ এবং তাদের উদাসিনতায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা, টিকা সংগ্রহের রোডম্যাপ এবং টিকাদান কর্মসূচির ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে সব তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে।’

বিএনপি বিশ্বাস করে, ‘দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে অতি দ্রুতই টিকা দেয়ার মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করতে হবে।’

সাবেক মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘এই করোনা নিয়ে খামখেয়ালী, দুর্নীতি এবং যে ব্যর্থতা সরকার দেখিয়েছে তার ফলে আজকে প্রত্যেকদিন মানুষ জীবন দিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে এবং ৮ হাজার ৬০০-এর ওপরে শনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেকদিন একই অবস্থা। এটা কমার কোনো লক্ষ্মণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। করোনা প্রতিরোধে টিকা হচ্ছে একমাত্র উপায়।’

‘আমরা বলব, অতিদ্রুত টিকা সংগ্রহ এবং টিকাদান কর্মসূচিকে স্বচ্ছ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। আমরা আগেও বলেছি, এ জন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। আজকে পত্র-পত্রিকায় দেখবেন, করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে যে খবরাখবর—সবই হতাশার খবর। আমরা আশার খবর শুনতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই কাজ করতে চাই। সরকারকেও সেইভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

‘সবাই মাস্ক পরুন’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমি দেশের সব মানুষকে বলব, আপনারা মাস্ক ব্যবহার করুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’

আপনি নিজে সুরক্ষা থাকুন, অন্যদেরকেও সুরক্ষিত করতে সহযোগিতা করুন।’

‘টিকা কূটনীতিতে সরকার চরম ব্যর্থ’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তারা প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কূটনীতিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। টিকা ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারণে দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। এই হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তাতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া অগ্রাধিকার তালিকা অনুসরণ করা হয়নি।’

‘সরকার ভারতের থেকে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিল। টিকার সম্পূর্ণ মূল্য অগ্রিম দেয়াও হয়ে গেছে। কিন্তু সিরাম ইনস্টিটিউট ২ দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবারহের পর আর টিকা দেয়নি। ফলে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।’

ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনোফার্মের ২০ লাখ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাসহ এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ডোজের বেশি। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫৯ লাখ ডোজের বেশি টিকা মজুদ আছে। অদূর ভবিষ্যতে টিকা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের দেশে উল্লেখিত সংখ্যক টিকা কত অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

‘বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই। কোভিড-১৯ অতিমারীর শুরু থেকে সরকারের রাখঢাক, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দুর্নীতি জনগণকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে, সরকার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রথম থেকে। তারা বলেছেন, করোনা সংক্রমিত হবে না। কিন্তু হয়েছে। তারপরে বলেছেন, সব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশের জনগনের কাছে পরিস্কার যে, সরকার তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর