দেশজুড়ে গত কয়েক দিনের অতি ও ভারী বর্ষণে বাড়ছে নদীর পানি। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে পানিবন্দি অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে দেশের কোথাও কোথাও দেখা দিতে পারে বন্যা।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকেই বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, তিস্তাসহ ওই দিকে ১০টি নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর পানি বাড়া শুরু করেছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন। বন্যার সৃষ্টি হবে, এই পূর্বাভাস তিনি জানিয়েছন।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ব্ৰহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এর ফলে এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বেড়ে কিছু স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বর্ষাকালের প্রথম ধাপে দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে গড়ে ৫১৮ মিলিমিটার। আর জুন মাসজুড়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝি দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে, বিশ্বজুড়ে যেটি ‘মনসুন’ নামে পরিচিত। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে এটি ত্বরান্বিত হয়েছিল। আগেভাগেই ঢুকছে এই বিশেষ বায়ুপ্রবাহ।
বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পানি বেড়েছে আত্রাই নদীতে। ছবি: নিউজবাংলা
জুলাইজুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বন্যার রূপ কেমন হতে পারে, জানতে চাওয়া হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের কাছে। বলেন, ‘পূর্বাভাস শুধু বলেছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। কতটা প্রবাহিত হবে, সেটা এখনও তারা জানাতে পারেনি। পানির প্রবাহ শুরু হলে তখন তাদের স্টেশন আছে, মেজারিং পয়েন্ট আছে, সেই পয়েন্ট দেখে তারা বলতে পারবেন।’
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্যার্তদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়াসহ তাদের জন্য খাদ্যসহায়তায় সরকার প্রস্তুত আছে বলেও জানালেন এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বন্যা এলে একটা কাজ থাকে যে, বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া। সে জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। তারা সেটা করবে। সেখানে আশ্রয় দেয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, খাদ্যসহায়তা দেয়া, সুপেয় পানি দেয়া, স্যানিটেশনের জন্য মোবাইল টয়লেট বসানো- এগুলো কাজের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের যে ফান্ড থাকে, সেটা যেকোনো দুর্যোগে আমাদের ব্যবহার করার অনুমতি আছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারি, ভূমিধস, পাহাড়ধস, খরা, নদীভাঙন- সব কাজেই সহায়তা দেয়ার জন্য আজকে আলোচনা হয়েছে।’
বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি আছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘এখনও আমরা ত্রাণ বিতরণ শুরু করিনি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমরা বিতরণ শুরু করব।’