চাল, ডাল, তেল, আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে এবার সরকারের ত্রাণসামগ্রীতে যুক্ত হলো রসালো আম। আর এটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতে।
ফলন ভালো হওয়ায় এবার আমের দাম বেশ কম। ফলটির পুষ্টিমানও অতুলনীয়। ফলের রাজা হিসেবে পরিচিত আমকে তাই এবার খাদ্যসহায়তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিবালয়ে রোববার ত্রাণসংক্রান্ত এক জরুরি সভা শেষে এ কথা জানান ত্রাণ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন যে, খাদ্যসহায়তার তালিকায় যেন আমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমের দাম কমে গেছে। আমে পুষ্টি বেশি। সে জন্য তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান শাটডাউনে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের পাশাপাশি শহরের ভাসমান লোক ও পরিবহনশ্রমিকদের ত্রাণ দিতে দেশের সব জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে অর্থ ও চাল বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার।
শিগগিরই বরাদ্দ দেয়া অর্থ ও চাল পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন সাউথ ও নর্থ, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী—এই চারটি যেহেতু বড় সিটি করপোরেশন, তাই আমরা ৫০ লাখ টাকা করে নগদ আজকে বরাদ্দ দিয়েছি। ১০০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ২৫ লাখ টাকা করে নগদ এবং ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
দেশের ৩২৮টি পৌরসভার জন্যও চাল ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি পৌরসভায় ১ লাখ করে টাকা এবং ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। আর ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ক্যাটাগরির ৬৪ জেলায় জিআর ক্যাশ দিয়েছি। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৫ লাখ টাকা, সাড়ে ৪ লাখ টাকা, ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর জেলাভেদে জিআর চাল দিয়েছি ১০০ মেট্রিক টন, ৭৫ মেট্রিক টন এবং ৫০ মেট্রিক টন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে যে বরাদ্দ নির্ধারণ করেছি, সেটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে জিও হয়ে যাবে।’
শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এসব বরাদ্দ দেয়া কিছুটা দেরি হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার শহরের ভাসমান মানুষ ও পরিবহনশ্রমিকদেরও ত্রাণসহায়তার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুটি বিষয় বলেছিলেন। সিটি করপোরেশনে ভাসমান লোকের সংখ্যা বেশি। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এবার যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, তাই পরিবহনশ্রমিকরাও খাদ্যকষ্টে থাকবে। সেখানে পরিবহনশ্রমিকদের এই মানবিক সহায়তার আওতায় আনতে হবে।’
এই নির্দেশনা সব জেলা প্রশাসককে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অসহায়দের দফায় দফায় ত্রাণ দিচ্ছে সরকার। ফাইল ছবি
ত্রাণ বিতরণ কীভাবে?
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানালেন, বরাদ্দ দেয়া ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব থাকছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতেই। এলাকার দরিদ্র ও অতিদরিদ্র, ভাসমান মানুষ এবং পরিবহনশ্রমিকদের খুঁজে এই ত্রাণ দেয়া হবে।
এনামুর রহমান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলার জন্য যেগুলো দিয়েছি, সেগুলো একেবারে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিতরণ হবে। বিতরণ করবেন ওয়ার্ডের মেম্বাররা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।’
ত্রাণ বিতরণেও কোনো অনিয়ম হয় কি না, সেদিকেও সরকারের নজর থাকবে বলে জানালেন প্রতিমন্ত্রী। বিষয়টি তদারকি করতে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মনিটর করবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং সিটি করপোরেশনের সিটি করপোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, সিটি করপোরেশন ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।’
যতদিন লকডাউন থাকবে, ততদিন এই সহায়তা চলমান থাকবে বলেও জানান এনামুর।