সীমান্তে শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ধরন এখন ঢাকায়।
রাজধানীর করোনা আক্রান্তদের নমুনায় ৮০ শতাংশের মধ্যে ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) একটি গবেষণায়।
ফলে সীমান্ত এলাকার মতো রাজধানীর হাসপতাগুলোতে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। বেড়েছে আইসিইউ এর চাহিদাও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনা রোগীর সেবা নিশ্চিতের জন্য ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ২৮টি করোনা হাসপাতাল রয়েছে। এ সব হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৫৮৯। শয্যা খালি রয়েছে ২ হাজার ৮৬১টি। দুই সপ্তাহ আগে খালি ছিল তিন হাজার ৬৫৬টি। এসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ শয্যা খালি রয়েছে ৩৫৪টি। দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৩৫টি।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, করোনা সেবা দেয়ার জন্য রাজধানীর ১৮টি হাসপাতালে মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ ১৪টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই।
আক্রান্ত রোগীরা আগে হাসপাতালে আসতে চাইতেন না। এখন বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। করোনা আক্রান্তের কয়েকদিনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে তীব্র শ্বাসকষ্ট। এই রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন।
গেল এক সপ্তাহ ধরে টানা করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছাড়াচ্ছে। শনাক্তও হচ্ছে ৮ সহস্রাধিক করে। পরিস্থিতির কারণে সরকার এরই মধ্যে দারিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করে দিয়েছে।
ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ অনেক বেশি। আইসিইউয়ের ক্যাপাসিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকেও রোগীর চাপ আছে।’
একই অবস্থা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হাসপাতালে করোনা রোগী সেবায় ২৭৫টি শয্যা থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে ৩০০ রোগীকে চিকিৎসার দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। অবস্থা সংকটাপন্ন বলে আইসিইউতে ধারণক্ষমতার অধিক রোগী ভর্তি আছেন।
হাসপাতালের কর্মকর্তা ইব্রাহিম জানান, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে আট থেকে ১০ জন করে দিনে করোনা রোগী এলেও, এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা নিতে দিনে ৪০ থেকে ৪৫ জন করে রোগী আসছেন।’
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক জেনারেল জামিল আহমদ বলেন, ‘সিট ফাঁকা নেই বিধায় অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ রোগীকে আপাতত ভর্তি নেয়া হচ্ছে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার করোনাভাইরাসের ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটা ঢাকার জন্য খুবই উদ্বেগের। ভ্যারিয়েন্ট ছাড়াও, জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে শৈথিল্যও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। গত দুই সপ্তাহে ঢাকা ও খুলনাতে সংক্রমণ বেড়েছে।’
সংক্রমণ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সারাদেশে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সংক্রমণে লাগাম টানতে সারাদেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেটাও মানুষ মানছে না। একটা সংক্রমণ বাড়ানোর একটি কারণ।’