ফরিদা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার তার শেষ কেমো থেরাপি দেয়ার কথা ছিল। তাকে কেমো দিতে চট্টগ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার আরেক বোন ফেরদৌস আরা। সঙ্গে ছিল ফরিদার দুই মেয়ে।
শরীরের যন্ত্রণা শেষ হলে আবার সব কিছু গুছিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল ফরিদার। ছিল আর একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন। কিন্তু মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল সব আয়োজন।
টাঙ্গাইলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ প্রাণ হারালেন পাঁচজন। নিহতদের মধ্যে আছে তার ১০ বছরের মেয়ে মারিয়াও।
নিহত ফরিদার বড়ভাই মো. সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হালিশহরে আমাদের বাড়ি। আমার ছোটবোন ফরিদার কয়েক বছর ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত। এক বছর ধরে সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী হাসপাতালে কেমো থেরাপি নিচ্ছিলেন ফরিদা।
‘শেষ কেমো থেরাপি দেয়ার জন্য শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন ফরিদারা। আমরা ভেবেছিলাম এবার সুস্থ হয়ে যাবে ও। কিন্তু তা আর হলো না। সঙ্গে থাকা ভাগ্নিসহ বড় বোনকেও হারালাম।
কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে সোহেলের। একটু বিরতি নিয়ে তিনি আবার বলতে শুরু করেন।
‘সকালে হঠাৎ করেই পুলিশ আমাকে ফোন করে বলে আপনার বোন-ভাগ্নি অনেক অসুস্থ তাড়াতাড়ি টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে চলে আসেন। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কিন্তু পরে নিউজে জানলাম অ্যাম্বুলেন্স ও পিকআপভ্যানের সংঘর্ষ হয়েছে টাঙ্গাইলে। এরপরই বুঝলাম অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে,’ বলেন মো. সোহেল।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে হাঁটার জন্য বের হয়েছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ কানে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি পিকআপ ও অ্যাম্বুলেন্স দুমড়ে-মুচেড়ে গেছে। ভেতর থেকে আসছে আর্তনাদ-চিৎকার।
‘আস্তে আস্তে আশেপাশের লোকজন আসল। আমরা ধরাধরি করে গাড়ির নিচ থেকে বের করলাম। এরপর দেখি তিনজন মৃত এবং বাকি ৭ জন আহত।’
টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে পাঠানোর পর শুনছি আরও দুইজন মারা গেছে।’
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম সজিব জানান, সকাল ৯ টার দিকে হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দুইজন পরে মারা যায়। তাদের হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আর বাকি পাঁচ আহতকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।