কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে হাসপাতালে থাকা ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনের মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং জুম মিটিংয়ে অংশ নেয়ার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ৪ কারারক্ষীকে।
এছাড়া ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘১৭ কারারক্ষীর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজন প্রধান কারারক্ষী সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে ৭ জন সহকারি প্রধান কারারক্ষীর বিরুদ্ধে। এছাড়া ৬ জন সাধারণ কারারক্ষীর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ঘটনা ঘটার পরে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে দায়িত্ব অবহেলা পেয়েছি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন একটা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি আইজি স্যার গঠন করে দিয়েছেন, তারা তদন্ত করছেন।’
সাময়িক বরখাস্ত
প্রধান কারারক্ষী নং-১১৫৫১- ইউনুস আলী মোল্লা, প্রধান কারারক্ষী নং-১১৪৭৪- মীর বদিউজ্জামান, প্রধান কারারক্ষী নং-১১৪৪৮- আব্দুস সালাম ও প্রধান কারারক্ষী নং- ১১৫২৪- আনোয়ার হোসেন।
কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং- ১২০১৮- জসিম উদ্দিন, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১২০০১- সাইদুল হক খান, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১১৬১৬- বিল্লাল হোসেন, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১১৯৭৫-ইব্রাহিম খলিল, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১১৯৮৭- বরকত উল্লাহ, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১২১২১- এনামুল হক, সহকারি প্রধান কারারক্ষী নং-১১৬৩২- সরোয়ার হোসেন, কারারক্ষী নং-১২৫৩৬- মোজাম্মেল হক, কারারক্ষী নং-১৪৯৭৪-জাহিদুল ইসলাম, কারারক্ষী নং-২২১৫৯-আমির হোসেন, কারারক্ষী নং-১২৩৮২-কামরুল ইসলাম, কারারক্ষী নং-১৫০৩৫-শাকিল মিয়া ও নবীন কারারক্ষী - আব্দুল আলীম।
জানা যায়, রফিকুল আমিন কারাবন্দি। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি তিনি। সেখানে থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি দুটি জুম মিটিংয়ের তথ্য ফাঁস হয়েছে গণমাধ্যমে। জানা যাচ্ছে, গত মে ও জুন মাসে রফিকুল দুটি অনলাইন মিটিংয়ে ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসা চালুর বিষয়ে আলোচনা করছেন। এরই মধ্যে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। আর জন্য ১৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথাও বলেছেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমিন এবং ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তান হন দুই জন।
তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট মোট ৫৩ আসামির বিচার শুরু হয়। তবে এখনও বিচার শেষ হয়নি। আর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। তারা কোনো টাকা ফিরে পায়নি। তাদেরকে প্রলুব্ধ করে বিনিয়োগে আগ্রহী করা ডেসটিনির সাবেক কর্মীরাও আছেন বিপাকে। পাওনাদারদের কারণে অনেকেই জায়গা জমি বিক্রি করে এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) ২০০০ সাল থেকে ব্যবসা করে আসছিল ডেসটিনি।
একটি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ডিএমসিএস) এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) পরিচালকেরা এমএলএমের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ডিএমসিএসের পর্ষদ সভায় অনুমোদন ছাড়াই সদস্যদের অগোচরে এবং তাঁদের প্রলোভন দেখিয়ে ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে সরিয়েছেন। বিনিয়োগের নামে ওই অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও ডেসটিনির মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪০০ কোটি টাকা৷
অপর মামলার তদন্ত অনুযায়ী, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার হয়েছে আরও ২ লাখ ৬ হাজার ডলার।