বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকা না ঘুরলে শ্রমিকদের টাকা নেই

  •    
  • ২ জুলাই, ২০২১ ২২:৫৮

পরিবহন খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের ৯০ শতাংশই দৈনিক মজুরিতে কাজ করে। লকডাউনে তাদের কোনো আয় নেই। মালিকেরা বলছেন, তাদের কিস্তির টাকা দেয়ারই সামর্থ্য নেই। পরিবহন শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে টাকা দেবেন কোথা থেকে?

শুক্রবার দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বেশ কয়েকজন শ্রমিক বসে থেকে অলস সময় পার করছিলেন। এদের একজন সুমন বলেন, ‘গাড়ি চললে টাকা পাই, না চললে বেকার। সরকার লকডাউন দেয় ভালো কথা, কিন্তু আমরা যে গাড়ি না চললে বেকার হয়ে যাই, এই কথাটা তো একটু ভাবা উচিত।’

সুমনের নিজের বাড়ি খুলনা। কাজ করেন দিগন্ত পরিবহনে।

ড্রিম ভিউ পরিবহনে হেলপারের কাজ করেন রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘গতকাল থাইকা গাড়ি বন্ধ। মালিক ১০০ টাকা দিছিল। কাল সারা দিন চলছি। কিন্তু আজকে চলার টাকা নাই। এক বন্ধু দুপুরের খাবার খাওয়াইছে। জানি না বাকি দিন কীভাবে চলব।’

পরিবহন খাতে কাজ করেন অন্তত ৪০ লাখ শ্রমিক। এদের মাত্র ১০ শতাংশ মাসিক বেতনভুক্ত। বাকিরা দৈনিক মজুরিতে কাজ করে।

গাবতলীতে অলন বসে থাকা মোহাম্মদ রিফাত বলেন, ‘লকডাউন আইলে আমাগো মরণ হয়। আমাগো কোনো রুটিরুজি নেই। খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। বাসা ভাড়া দেব নাকি খাব? সামনে একটা ঈদ। রোজার ঈদটাও আমরা পাই নাই।’আরও পড়ুন: দোকান খোলার অনুমতি চান কামাররা

ঢাকা থেকে লালমনিরহাটে চলাচলকারী লালন পরিবহনের মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য আমরা কী করতে পারি, বলেন? আমরাই তো চলতে পারছি না। গাড়ি না চললে আমাদের কোনো ইনকামই হয় না। ব্যাংক লোন নিয়ে গাড়ি কিনেছি। এখন তো ব্যাংক লোনের কিস্তিই দিতে পারছি না। সরকারের উচিত পরিবহন মালিকদের লোনের সুদ মওকুফ করার ব্যবস্থা করা।’

তিনি আরও বলেন, সরকার তো বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য করে। পরিবহন খাতের শ্রমিকদের দিকেও একটু সরকারের তাকানো উচিত। না হলে এই মানুষগুলো কই যাবে?’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে, সারা দেশের বিভিন্ন রুটে এসি, নন-এসি ও মিনিবাস মিলিয়ে ৮০ হাজার বাস চলাচল করে। এক দিন পরিবহন বন্ধ থাকলে এই খাতের দৈনিক ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনে পরিবহন খাতের ক্ষতি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহাজান খান বলেন, ‘করোনার কারণে গাড়ি চলাচল না করলে শ্রমিকদের আয় বন্ধ থাকে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিষয়টি মালিকদের অনুধাবন করতে হবে এবং সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও শ্রমিকদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা তো খুবই সীমিত আয় করে। তাই দীর্ঘদিন লকডাউন চললে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন। তাই আমি মালিকদের পাশাপাশি সরকারকেও অনুরোধ করব শ্রমিকদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে।’

পরিবহন মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি’-এর মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘অনেক মালিকই ব্যাংক লোন নিয়ে বাস কিনেছেন। তারা এখন সময়মতো লোন শোধ করতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও সরকার বেশ কয়েকবার লকডাউন দিয়েছিল। সেই ক্ষতিই আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখন আবার শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় আমরা চাই সরকার এ খাতের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করুক।’

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি শহিদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘গত বছর থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে আমাদের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পোষাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সামনে এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। না হলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর