বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বানর-হনুমানের জন্য ‘সেতু’ বানালেন দুই জবি শিক্ষার্থী

  •    
  • ২ জুলাই, ২০২১ ২২:০৬

মূলত বনাঞ্চলের ভেতরে সড়ক বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে প্রাইমেট বা বানর-হনুমান জাতীয় প্রাণীদের রক্ষা করবে এই সেতু। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান দাতা সংস্থার অর্থায়নে সাতছড়ি বনে বিশেষ তিনটি কৃত্রিম সেতু নির্মাণ করেছেন গবেষক দম্পতি হাসান আল-রাজী ও মার্জান মারিয়া।

সিলেট অঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের চলাচলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই শিক্ষার্থী কৃত্রিম সেতু নির্মাণ করেছেন।

এরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের (৬ষ্ঠ ব্যাচ) শিক্ষার্থী হাসান আল রাজী চয়ন ও একই বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের (১২তম ব্যাচের) মারজান মারিয়া।

মূলত বনাঞ্চলের ভেতরে সড়ক বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে প্রাইমেট বা বানর-হনুমান জাতীয় প্রাণীদের রক্ষা করবে এই সেতু। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান দাতা সংস্থার অর্থায়নে সাতছড়ি বনে বিশেষ তিনটি কৃত্রিম সেতু নির্মাণ করেছেন গবেষক দম্পতি হাসান আল-রাজী ও মার্জান মারিয়া।

সম্প্রতি এই দম্পতি বাংলাদেশে নতুন ব্যাঙের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে আলোচিত হন।

সেতু নির্মাণকারী গবেষকরা জানান, ‘সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হওয়া বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রধান হুমকিগুলোর মধ্যে একটি।’

‘বৈশ্বিক উন্নয়ন আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই উন্নয়ন কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাল হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য। এই উন্নয়নের পথ ধরে বনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে মহাসড়ক, নেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার। যার ফলে রাস্তা পার হয়ে বনের এক দিক অন্য দিকে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। এই একই চিত্র আমাদের দেশেও দেখতে পাই।’

বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল-রাজী বলেন, “আমরা ২০১৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন Primate এর সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করি। নিজেদের সংগ্রহীত তথ্য, সোস্যাল মিডিয়া, নিউজ ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আর্ন্তজাতিক জার্নাল ‘Zoologia’তে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করি।” ‘সেই তথ্যানুসারে, গত ২০১৫-২০১৭ সালের মধ্যে সাতছড়ি বনে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি এবং লাউয়াছড়াতে ১৩টি Primate সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা গেছে। এই মৃত্যুর মিছিলে লম্বালেজী হনুমানেদের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। আমাদের ধারণা, এই লম্বালেজ বিশিষ্ট হনুমানগুলো যখন তাদের চলাচলের জন্য বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে তখন তাদের লেজ দুই তারের মাঝে পড়ে বৈদ্যুতিক সার্কিট পূরণ করে। যার ফলে তারা তড়িতাহত হয়ে মারা যায়।’

“এই সমস্যা কিছুটা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা ‘Artificial Canopy Bridges For Conservation’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নেই। এই প্রকল্প মূল গবেষক মার্জান মারিয়া ২০১৯ সালে ‘Explorer club’ নামের আমেরিকান একটি সংস্থায় এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন এবং কিছু আর্থিক সহযোগিতা পান। এছাড়াও যারা গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজের জন্য ‘Plumploris e.V.’ নামের একটি জার্মানিভিত্তিক দাতা সংস্থাও সহযোগিতা করে।”

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল সাতছড়ি বনে রাস্তার পাশের গাছগুলোতে Artificial Bridges তৈরি করে কৃত্রিম সংযোগ করে দেয়া যাতে তারা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। আমরা বন বিভাগের সহায়তায় সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করি সেতু নির্মাণের জন্য। ২০২০ সালের ১ নভেম্বরে আমাদের সেতুগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হয় এবং তিন মাস অপেক্ষা করি যাতে বন্যপ্রানীরা সেতুটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফর এবং অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনা নেকারিস।’

মার্জান মারিয়া বলেন, ‘আমরা তিনমাস পরে সেতুর দুইপাশে একটি করে ক্যামেরা ট্র্যাপ স্থাপন করি বন্যপ্রাণীর চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য। এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ক্যামেরা ট্রাপ স্থাপন করি এবং দুই সপ্তাহ পর পর ক্যামেরা ট্রাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাতছড়ি বনে যাই। ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের ক্যামেরা ট্রাপে বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর চলাচলের ছবি পেয়েছি। যাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, হনুমান এবং বিভিন্ন ইদুরগোত্রীয় প্রাণী।’

‘আমাদের দেশে এমন আরও কিছু বন আছে যার ভিতর দিয়ে এমন মহাসড়ক এবং বৈদ্যুতিক তার গেছে। এই বনগুলোতেও যদি বনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলোতে এমন Artificial Canopy Bridge নির্মাণ করতে পারা যায় তবে হয়তোবা বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর মিছিল কিছুটা হলেও কমাতে পারা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষাও করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর