ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ভিডিও মিটিং অ্যাপ ব্যবহার করে নতুন করে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করার প্রস্তুতির অভিযোগ পাওয়ার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রধান কারারক্ষীসহ আট সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
তিন সদস্যের কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কামিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলামকে। মুন্সিগন্জের জেল সুপার নুরুন্নবী ভুইয়া এবং নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ রফিকুল ইসলামকে করা হয়েছে সদস্য।
বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কমিটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যেই বিষয়টি তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদান করবে ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রফিকুল আমিন কারাবন্দি। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি তিনি। সেখানে থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি দুটি জুম মিটিংয়ের তথ্য ফাঁস হয়েছে গণমাধ্যমে। জানা যাচ্ছে, গত মে ও জুন মাসে রফিকুল দুটি অনলাইন মিটিংয়ে ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসা চালুর বিষয়ে আলোচনা করছেন। এরই মধ্যে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। আর জন্য এক হাজার তিনশ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথাও বলেছেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমিন এবং ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তান হন দুই জন।
তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট মোট ৫৩ আসামির বিচার শুরু হয়। তবে এখনও বিচার শেষ হয়নি। আর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। তারা কোনো টাকা ফিরে পায়নি। তাদেরকে প্রলুব্ধ করে বিনিয়োগে আগ্রহী করা ডেসটিনির সাবেক কর্মীরাও আছেন বিপাকে। পাওনাদারদের কারণে অনেকেই জায়গা জমি বিক্রি করে এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) ২০০০ সাল থেকে ব্যবসা করে আসছিল ডেসটিনি।
একটি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ডিএমসিএস) এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) পরিচালকেরা এমএলএমের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ডিএমসিএসের পর্ষদ সভায় অনুমোদন ছাড়াই সদস্যদের অগোচরে এবং তাঁদের প্রলোভন দেখিয়ে ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে সরিয়েছেন। বিনিয়োগের নামে ওই অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও ডেসটিনির মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪০০ কোটি টাকা৷
অপর মামলার তদন্ত অনুযায়ী, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার হয়েছে আরও ২ লাখ ৬ হাজার ডলার।