পাঁচ বছর আগে এই দিনে রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। নৃশংস সে হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা দেশ। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হয়। জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তাও প্রাণ হারান।
আলোচিত সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স এখন শুনানির অপেক্ষায়। এরই মধ্যে মামলাটির পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেই শুনানি শুরু হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সবকিছু প্রস্তুত আছে। করোনার এই সংকট কেটে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেই মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে বেঞ্চ গঠনের আবেদন করবেন তারা।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। এ মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে খালাস দেয় বিচারিক আদালত।
এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিরা আপিল দায়ের করেন। পরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে এসেছে। এখন হাইকোর্ট বিভাগের ডেথ রেফারেন্স শাখা সেটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করছে। শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করা হলে সেখানে পেপারবুক পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হোলি আর্টিজানের ঘটনাটি ছিল একটি দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মান্তিক। কিছু বিপথগামী লোক এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যেখানে বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কিছু ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলার আসামিদের বিচারিক আদালত ফাঁসি দিয়েছে। মামলাটি হাইকোর্টে আসে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য। মামলাটির পেপারবুক ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু কোভিডের কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকে স্বাভাবিক আদালত হচ্ছে না। সে কারণে এসব মামলার শুনানিতে দেরি হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই মামলাটি শুনানি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় হাইকোর্টে বহাল রাখতে সব ধরনের আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করবেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, এ মামলার পেপারবুক তৈরির কার্যক্রম প্রায় শেষ। এখন প্রধান বিচারপতি যে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। সেখানে এ মামলার শুনানি হবে।
হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন।
দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর হোলি আর্টিজান মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে বিচারিক আদালত ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এ ছাড়াও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার এক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়।
রায়ের পর নিয়ম অনুসারে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও খালাস চেয়ে করা আসামিদের জেল আপিল শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এ লক্ষ্যে বিচারিক আদালতের যাবতীয় নথি তথা মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, রায়সহ মোট ২ হাজার ৩০৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় জমা করা হয়। পরে মামলার যাবতীয় নথিপত্র একত্র করে আপিল শুনানির জন্য উত্থাপনের জন্য পেপারবুক তৈরি করতে বিজি প্রেসে পাঠায় সুপিম কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা।