আগের বছরের তুলনায় পরিচালন মুনাফা বেশি করলেও চূড়ান্ত মুনাফা কমে গেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের। আর ৩০ কোটি টাকার মতো মুনাফা কমায় তারা ইতিহাসের সবচেয়ে কম লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি বোনাস হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
আগের বছর ব্যাংকটি এর দ্বিগুণ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে বছর ৫ শতাংশ বোনাসের পাশাপাশি শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা নগদ দেয়া হয়েছিল।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্যাংক খাতের সবগুলো কোম্পানি তার লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাল।
অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাস পর বুধবার বিকেলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈঠকে জানানো হয়, গত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ১৮ পয়সা মুনাফা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৩৪ পয়সা মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি।
অর্থাৎ ব্যাংকটি চূড়ান্ত মুনাফা করেছে ৩৬১ কোটি ৮৩ লাখ টাকাও বেশি।
আগের বছর ব্যাংকটি ৩৯১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কিছু বেশি মুনাফা করেছিল।
আয় কমলেও ব্যাংকটির সম্পদমূল্য বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৯২ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১৬ টাকা ৬৮ পয়সা।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদেরকে আগামী ১৭ আগস্ট শেয়ার ধরে রাখতে হবে।
পুঁজিবাজারে যতগুলো ব্যাংক আছে, তার মধ্যে ৩০টিই এবার লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য দিকে লোকসানের জন্য আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বরাবরের মতো এবারও লভ্যাংশ দেয়নি।
এর মধ্যে কেবল শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৫টি ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যাশনাল ছাড়াও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে এবি ও আইএফআইসি ব্যাংক। অন্যদিকে এমটিবি ও রূপালী ব্যাংক দিয়েছে ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার। বাকি ব্যাংকগুলো বোনাসের সঙ্গে নগদ টাকাও দিচ্ছে বিভিন্ন হারে।
নগদ ও বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, এমর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে আড়াই শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা নগদ ও প্রতি ২০০ শেয়ারে একটি বোনাস দেবে তারা।
ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে আগেভাগেই লভ্যাংশ ঘোষণার সুনাম থাকলেও এবার তালিকায় সবার শেষে ঘোষণা হলো এই লভ্যাংশ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিরগুলোর মধ্যে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দুই একটি বহুজাতিক কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। নিয়ম অনুযায়ী জীবন বিমা ছাড়া অর্থবছর শেষ হওয়ার ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভাংশ সংক্রান্ত সভা করতে হয়।
তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তা আরও ৩০ কর্মদিবস বাড়িয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই ১২০ কর্মদিবস সাধারণত ছয় মাস হয়ে থাকে। আর এই সময়ের পুরোটাই নিল এনবিএল।
এবার বিলম্বের নানা কারণ রয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মারা যান দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার। এরপর তার ছেলে মেয়েদের মধ্যে দ্বন্দ্বের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। খেলাপি ঋণ নিয়েও নানা ঘটনা ঘটেছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগের পরিচালন মুনাফাই আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এনবিএল। এই কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা কিছুটা বাড়ে।
৩১ ডিসেম্বরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটি গত বছর পরিচালন মুনাফা ছিল ৯৮০ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৯৫০ কোটি টাকা।
তবে এই মুনাফা থেকে ঋণের সঞ্চিতি সংরক্ষণ আর ৪০ শতাংশ কর পরিশোধের পর চূড়ান্ত মুনাফার ঘোষণা করা হয়।
পুঁজিবাারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমলেও ২০২০ সালে চূড়ান্ত মুনাফা বেড়েছে। অল্প কিছু ব্যাংকেরই এটি কমেছে, যার একটি হলো প্রথম প্রজন্মের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধনের এই ব্যাংকটি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে পুরনো ও বড় ব্যাংকগুলোর একটি হলেও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার মূল্য একেবারেই তলানিতে। প্রতি বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করে, এমন কোম্পানির মধ্যে এত কম দামে আর কোনো শেয়ার বিক্রি হয় না।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৮ টাকায়। অর্থাৎ অভিহিত মূল্য ১০ টাকার চেয়ে ২০ শতাংশ কমে আছে দাম।
গত দুই বছরে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা আর সর্বনিম্ন দাম ছির ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
ব্যাংক খাতের একমাত্র লোকসানি কোম্পানি আইসিবি ইসলামীর দাম এর চেয়ে কম আছে।