করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ৭ দিনের শাটডাউন বাস্তবায়নে ১০৬ কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
এ দায়িত্ব দিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১০(৫) ধারা অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডারের এই ১০৬ কর্মকর্তাকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর ৫ ধারা অনুযায়ী তারা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
বৃহস্পতিবার থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে এই ১০৬ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করবেন ৫৫ কর্মকর্তা। আর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ১২, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ৬, রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ২, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ২, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ৯, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ৫ এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ১৫ জন কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসটির ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ, যা পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই বছরের ২৬ মার্চ যে সাধারণ ছুটি, চলতি বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৫ এপ্রিল লকডাউন নামে পরিচয় পাওয়া বিধিনিষেধ এবং জেলায় জেলায় স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন এলাকা অবরুদ্ধ করা আর রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে আশেপাশের চার জেলায় যান চলাচল বন্ধ করার পর এই শাটডাউন এখন ব্যাপক আলোচনায়।
৫ এপ্রিল দেয়া লকডাউন পরে ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ নামে পরিচিতি পাওয়ার পর কিছুদিন অন্তর অন্তর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়।
তবে সরবার এবার যে অনেক বেশি কঠোর হতে যাচ্ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এবার প্রশাসনের পাশাপাশি নামানো হচ্ছে সেনাবাহিনী। আর সদস্যরা টহল দেবে সারা দেশেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অকারণে ঘর থেকে বের হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ প্রধান বেজনীর আহমেদ শাটডাউনের আগের দিন বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে এক নির্দেশনায় বলেছেন কঠোর হতে।
তবে লকডাউনের মধ্যে শাটডাউনেও পোশাক কারখানা, ব্যাংক, পুঁজিবাজার বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে। যদিও ব্যাংকের সব শাখা খোলা থাকবে না। অল্প কিছু শাখাতেই কেবল চলবে লেনদেন। আর পুঁজিবাজারে লেনদেন করতে বিনিয়োগকারীরা যেতে পারবেন না ব্রোকারেজ হাউজে। তাদেরকে অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহই চলবে না বৃহস্পতিবার। তবে রিকশা চালু থাকবে। চলতে পারবে না প্রাইভেট কার।
ঢাকায় যেসব বাজার কাঁচাবাজার রয়েছে, সেগুলোকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসা হবে; যাতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে পারেন। হোটেলগুলো শুধু খাবার কেনার জন্য খোলা থাকবে। কেউ বসে খেতে পারবেন না। এ ছাড়া আমরা অলিগলির কোনো দোকান খোলা রাখতে না দেয়ার কথা বলেছে পুলিশ।
সুপার শপগুলোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা নেই। তবে এর আগে যতবার বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল, প্রতিবারই এই শপগুলো খোলা ছিল একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।