ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান হামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এবং আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেই শুনানি শুরু হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় বিদেশি নাগরিকসহ প্রাণ হারান ২০ জন। এ ঘটনায় করা মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে খালাস দেয় বিচারিক আদালত।
পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। সেই সঙ্গে আসামিরা আপিল করেন। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মামলার পেপার বুক তৈরি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার পেপার বুক বিজি প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে এসেছে। এখন হাইকোর্ট বিভাগের ডেথ রেফারেন্স শাখা সেটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করছে। শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করা হলে সেখানে পেপারবুক চলে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনাটি ছিল একটি দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মান্তিক। কিছু বিপদগামী লোক এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যেখানে বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কিছু ব্যক্তি হত্যা করা হয়েছে। এ মামলার আসামিদের বিচারিক আদালত ফাঁসি দিয়েছেন। ওই মামলাটি হাইকোর্টে আসে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য। মামলাটির পেপারবুক তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু কোভিডের কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকে স্বাভাবিক আদালত হচ্ছে না। সে কারণে এসব মামলার শুনানিতে দেরি হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই মামলাটি শুনানি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা হয়। সেখানে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মধ্য দিয়ে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বিচারিক আদালত ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং একজনকে খালাস দেয়।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করে বিচারিক আদালত। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়।
এরপর নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও খালাস চেয়ে করা আসামিদের আপিল আবেদন শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এ লক্ষ্যে বিচারিক আদালতের যাবতীয় নথি তথা মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায় সহ মোট ২ হাজার ৩০৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় জমা করা হয়। পরে মামলার যাবতীয় নথিপত্র একত্রিত করে আপিল শুনানির জন্য উত্থাপনের জন্য পেপারবুক তৈরি করতে বিজি প্রেসে পাঠায় সুপিম কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলার পেপারবুক তৈরির কার্যক্রম প্রায় শেষ। এখন প্রধান বিচারপতি যে দিন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। তখনই মামলাটির শুনানি হবে।’