বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খোকনের অভিযোগ দুদকের অস্বীকার

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২১ ১৭:৫৭

‘দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দুদক কখনোই কারো প্ররোচনা বা বুদ্ধিতে চলে না। কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। দুদক সব সময়ই নিজেদের অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। সে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এমন সুযোগও নেই।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অভিযোগ আমলেই নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খোকনের বিরুদ্ধে দুদকের করা অর্থ পাচারের মামলা ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের প্ররোচনা করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সকালে অভিযোগ করেন সাবেক মেয়র।

এই মামলায় দুদকের করা আবেদনের প্রেক্ষাপটে আদালত সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের আটটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয় রোববার।

খোকনের অভিযোগের বিষয়ে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ সত্য নয়। এর পেছনে তাপসের কোন হাত নেই। দুদক তদন্তের ভিত্তিতে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আদালতে এইসব অ্যাকাউন্ট জব্দের আবেদন করেছে।’

‘দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দুদক কখনোই কারো প্ররোচনা বা বুদ্ধিতে চলে না। কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। দুদক সব সময়ই নিজেদের অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। সে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এমন সুযোগও নেই।’

কোনো নোটিশ বা আত্মরক্ষার সুযোগ দেয়া হয়নি—খোকনের এমন অভিযোগের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘দুদক সব সময়ই সবার স্বার্থ রক্ষা করে চলে। কখনোই একচাটিয়া, একপেশে কিছু করে না। তাই সময় না দিয়ে বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে সাবেক মেয়রের অভিযোগের বিষয়ে জানতে বর্তমান মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পরে ডিএসসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘বিষয়টি আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট। বিচারাধীন কোনো বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কোনো ধরনের বক্তব্য বা প্রতিউত্তর দিতে নিরৎসুক।’

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের করা অর্থ পাচারের মামলা বর্তমান মেয়রের প্ররোচনায় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।

খোকন বলেন, ‘তাপস তার ব্যর্থতা ঢাকতে বারবার আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে। এখন দুদককে ব্যবহার করে মামলা দিয়েছে।’

দুদকের মামলা নিয়ে খোকন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস জম্মেছে তাপসের ক্রমাগত প্ররোচনায় এমন কাণ্ড ঘটেছে। আপনি দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করলেই পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলোতে আমার ও আমার পরিবারের ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৩ টাকা আছ।

‘দুর্নীতি দমন কমিশন আমার ও আমার পরিবারের কোনো সদস্যকে কোনোরূপ নোটিশ প্রদান না করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি আদালতের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমন কর্মকাণ্ড আমার ও আমার পরিবারের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে।’

তাপসের নগর পরিচালনায় সীমাহীন ব্যর্থতার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তাপস এই ব্যর্থতা ঢাকতে আমার বিরুদ্ধে হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের এমন কর্মকাণ্ড তাপসের প্ররোচনায় সংগঠিত হয়েছে।

‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমার ও আমার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকলে সংসার চালাতে সমস্যা হবে। আমার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমার সংসার পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে যাবে। বিভিন্ন ইউটিলিটি বিলসহ বকেয়া প্রদান আমার জন্য কষ্টসাধ্য হবে।’

দুদকের কাছে অনুরোধ জানিয়ে খোকন বলেন, ‘আপনারা আদালতের মাধ্যমে আমার জব্দকৃত অ্যাকাউন্ট সচল করে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনার সুযোগ করে দিন। এটা আমার পরিবারের মৌলিক অধিকার।’

তদন্তে আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতেই পারে। তবে কারও প্ররোচনায় ও দলাদলিতে দুর্নীতি দমন কমিশন জড়াবে, এটা হতে পারে না। কমিশনের নিরেপক্ষ ভূমিকা একজন নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই।’

ডিএসসিসির সাবেক মেয়র বলেন, ‘প্রায় এক শতাব্দী যাবত এ দেশের মানুষের সেবা করে আসছে আমার পরিবার; প্রায় ৭০ বছর ধরে। ঢাকার শেষ সর্দার আমার নানা মাজেদ সর্দার। তার মেয়ে আমার মা ফাতেমা হানিফ। তার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেও আমার বৃদ্ধ মাকে হয়রানি করা হয়েছে।’

বক্তব্যের এ পর্যায়ে এসে সাঈদ খোকন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। চিৎকার করে তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন করে। মাজেদ সর্দার ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হানিফের স্ত্রী লাঞ্ছিত হবে, এটা ঢাকাবাসী মেনে নিবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার যদি ব্যবসাতে মনোযোগ দিত, তাহলে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীতে পরিণত হতো...আমার পরিবার এই ঢাকা শহরের জন্য কাজ করেছে। হানিফের অবদান এই শহরের মানুষ স্বীকার করবে।’

ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, মা ফাতেমা হানিফ, স্ত্রী ফারহানা আলম ও বোন শাহানা হানিফের আটটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) নির্দেশ দিয়েছে বিচারিক আদালত।

ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এ আদেশটি দেন।

দুদকের আদালত পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম সোমবার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মামলার অনুসন্ধান চলাকালে দুদকের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ রোববার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করেছে।

যে ৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে সাঈদ খোকনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তিনটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

এ ছাড়া তার মা ফাতেমা হানিফের একটি, বোন শাহানা হানিফের দুটি ও স্ত্রী ফারহানা আলমের দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, ‘ওই ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক ও বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো বৈধ উৎস থাকা অসম্ভব এবং সন্দেহজনক।

‘তাই অভিযোগটি সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে যেন অর্থ উত্তোলন, স্থানান্তর বা হস্তান্তর করা না যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যাংক হিসাবগুলো জরুরি ভিত্তিতে অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।’

আবেদনে আরও বলা হয়, ‘অভিযুক্তরা ওই ব্যাংক হিসাবের অর্থ স্থানান্তর করতে চেষ্টা করেছেন, যা তদন্তে উঠে এসেছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি পর্যন্ত না হওয়া পর্যন্ত এসব অস্থাবর সম্পত্তি স্থানান্তর বা হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’

আরও পড়ুন: অর্থ পাচারের মামলায় তাপসের প্ররোচনা: খোকন

খোকনের মন্তব্য নিয়ে বক্তব্য নেই তাপসের

এ বিভাগের আরো খবর