বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সহায়তা প্যাকেজে উপকৃত ৬ কোটি মানুষ: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২১ ১৪:৪০

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেয়া সাহসী এসব পদক্ষেপের কারণে দুর্যোগের মধ্যেও মানুষের জীবন ও জীবিকা যেমন রক্ষা করা গেছে, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখাও সম্ভব হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতিও সামগ্রিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারের নেয়া ২৩টি সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনে করোনাকালীন সময় সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বিস্তারিত তুলে ধরার সময় তিনি এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৩টি প্যাকেজের জন্য ঘোষিত ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিপরীতে মে, ২০২১ পর্যন্ত (প্রকল্পগুলোর) বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৫ লাখ ব্যক্তি এবং ১ লাখ ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারি এসব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন।

‘আমাদের নেয়া সাহসী এসব পদক্ষেপের কারণে দুর্যোগের মধ্যেও মানুষের জীবন ও জীবিকা যেমন রক্ষা করা গেছে, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখাও সম্ভব হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতিও সামগ্রিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি, চলতি বছরের জুলাই-মে সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ। মে ২০২১ এ সার্বিক মূল্য স্ফিতি ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এর পাশাপাশি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।’

করোনার সময় নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ সংসদকে অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের আমদানি রপ্তানিসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা প্রভাব আসে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ প্রভাব দেখা দেয়। সে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে ২৫ মার্চ আমরা রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক কর্মচারিদের বেতনভাতা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করি। একই বছরের ৫ এপ্রিল আমরা ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার চারটি প্যাকেজ ঘোষণা করি। এই প্যাকেজের কলেবর কিন্তু বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং নতুন নতুন সেক্টর ও জনগোষ্ঠিকে এর আওতায় নিয়ে আসি এবং প্যাকেজের আওতা আমরা সম্প্রসারণ করি।

‘এ পর্যন্ত ২৩টি প্যাকেজ চালু করেছি, যার মুল আর্থিক মূল্য ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুমিত জিডিপি প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিকে আর্থিক সহায়তা আমরা প্রদান করেছি।’

করোনায় সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের সময় চারটি কৌশল নির্ধারণ করা হয় বলে জানান সংসদ নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ব্যাংক সুবিধার মাধ্যমে স্বল্প সুদে বিভিন্ন ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা, সরকারে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এই চার কৌশল আমরা নিয়েছি।

‘এর মধ্যে কিছু কাজ আমরা দ্রুততার সাথে করেছি। কিছু কাজ আছে স্বল্প মেয়াদী, কিছু দীর্ঘ মেয়াদী ও কিছু মধ্য মেয়াদী। আমাদের লক্ষ্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সকল ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে সুরক্ষা দেয়া এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমুলক করা। গরীব মানুষই হোক, মধ্যবিত্তই হোক বা বড়লোকই হোক মানুষের মাঝে সামঞ্জস্য রেখে এটা করা হয়েছে। সকলেই যেন সুবিধাটা পায় সে ব্যবস্থাটা আমরা হাতে নিয়েছি।’

প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর হাল চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী তাদের সকলকে সহায়তার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। রপ্তানিমুখী শিল্পে শ্রমিকদের বেতনভাতার জন্য দেয়া ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সম্পূর্ণই আমরা ব্যবহার করেছি। এর আওতায় ৩৮ লাখ শ্রমিক-কর্মচারিকে বেতনভাতা বাবদ সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখা গেছে।

‘ক্ষতিগ্রস্থ সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ৪০ হাজার কোটি টাকা আমরা স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা প্রদান করেছি। কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে মে ২০২১ পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৭৩৫ টি এসএমই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪ হাজার ৭৭২ কোটি টাকার স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন ৫ হাজার ২৫২ জন। যারা বলছে এসএমই ফাউন্ডেশনের টাকা পায়নি, তাদের এটা ভালো করে জানা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানিকারকদের জন্য ঘুর্ণায়মান এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আকার আমরা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নিত করেছি। এই ফান্ড থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪২ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

‘করোনা রোগীদের সেবা প্রদানের কাজে সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলকে দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানি দেয়া হয়েছে। গত ১৬ জুন ২০২১ পর্যন্ত আমরা মোট ২০ হাজার ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে মোট ১০৪ কোটি টাকা সম্মানি প্রদান করেছি।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনায় সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ১৭৩ জনের পরিবারকে মোট ৬৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য আমরা দুই লাখ ১১ হাজার মেট্রিকটন চালসহ খাদ্র সামগ্রী বিতরণ করেছি। সারা দেশে এক কোটি ১৯ লাখ নাগরিক আমাদের এ খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।

‘দেশের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে নির্বাচিত ৩৫ লাখ উপকারভোগী পরিবারের প্রত্যেককে প্রথম দফায় দুই হাজার ৫০০ টাকা করে অনুদান প্রদান করেছি। গৃহহীন মানুষের জন্য সারা দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে এ পর্যন্ত দু্ই দফায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ১ লাখ গৃহ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আমরা আশা করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটা শেষ করতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, কৃষকের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে ৫ হাজার কোটি টাকার কৃষি পুনঅর্থায়ন স্ক্রিমের আওতায় গত মে ২০২১ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার আওতায় এক লাখ ৭৯ হাজার কৃষক ঋণ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমরা ৮টি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষুদ্র ঋণ ও পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করেছি। যারা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণ সংগ্রহ করতে পারিনি তাদের জন্যই মূলত এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা আমরা আরও একশটি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছি।

‘আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের সরকার এ সংকটকালেও বরাবরের মতো মানুষের পাশে আছে, মানুষের পাশে থাকবে। একই সাথে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, মানুষের জীবন জীবিকার সুরক্ষা দেয়া এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সামনের সময়গুলোতে যেকোনো উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন হলে আমরা তা দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব এবং মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াব।’

এ বিভাগের আরো খবর