ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। একই সঙ্গে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই দাবি তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকার পতন। স্বাধীনতা দিবস ওরা সহ্য করতে পারে না, ওদের বুকে ব্যথা লাগে।’
তিনি বলেন, ‘কথা নাই, বার্তা নাই বায়তুল মোকাররমে জমা হয়ে তাণ্ডব চালায়। সেখানে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারেন না। বায়তুল মোকাররমে এ ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত।’
হেফাজতের রাজনীতির সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘তারা বায়তুল মোকাররমকে প্লাটফর্ম বানিয়েছে। কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে, মানুষ পুড়িয়েছে। এই হেফাজতে ইসলাম এরা ছিল স্বাধীনতাবিরোধী নেজামে ইসলামী।
‘মানুষ মেরে এরা ইসলামকে হেফাজত করবে কীভাবে? এটা জঙ্গি সংগঠন, এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হোক। যেভাবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হয়েছে সেভাবে।’
২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে বের হয়ে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায় কওমিপন্থিরা। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসত হয়ে উঠে হেফাজত। ছবি: নিউজবাংলাতিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে অধিকার আদায়ের কথা বলেই ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে শাসন করা হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছেন যার বাংলা করলে দাঁড়ায় বি মানে বাংলাদেশ, এন মানে না এবং পি মানে পাকিস্তান। অর্থাৎ বাংলাদেশ না পাকিস্তান। জিয়া জঙ্গি সন্ত্রাসীদের স্থান করে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ করা।’
যা করেছে হেফাজত
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম এলাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মীরা।
এই সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল নিয়ে হামলা করে স্থানীয় ডাকবাংলো, এসিল্যান্ড অফিস ও থানায়। তাদের ঠেকাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন চারজন।
প্রায় একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়, আনসার ক্যাম্পে আগুনের পাশাপাশি হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সেখানে গুলিতে প্রাণ হারান একজন।
তাণ্ডবের এক পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন হেফাজত সমর্থকরা। ছবি: নিউজবাংলাপরের দিন একই জেলায় সড়ক অবরোধ করে হেফাজত সমর্থকরা পুলিশের ওপর আবার হামলা চালালে গুলিতে নিহত হন আরও পাঁচজন।
২৮ মার্চ হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে তিন কিলোমিটার, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ আর বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালান হেফাজতের কর্মীরা।
মেঘনা পারের জেলাটিতে হেফাজত কর্মীদের আক্রমণ ছিল ভয়াবহ। সেখানে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভূমি অফিসে আগুন দেয়ার কারণে বহু নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।