দেশের কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার। ২১ জুন এসব প্রকল্প বাতিল প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বেলা ১১ টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
বাতিল হওয়া কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার ৩৪৬ মেগাওয়াট। প্রকল্পগুলো ২০০৮ সালে অনুমোদন পেয়েছিল।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তহবিল সংগ্রহের ঝামেলা, সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারা ও পরিবেশগত কারণে মূলত এসব কেন্দ্র বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র।
বাতিল হওয়া প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলো বা কয়েকটি পরবর্তিতে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিতে রূপান্তরিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, গত ২১ জুন প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বাতিলের প্রস্তাবণায় অনুমোদন দেন। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ স্বাক্ষরিত এই কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বাতিলের জন্য প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠান।
বাতিল হওয়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের তিনটি, সরকারি খাতের চারটি এবং জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রকল্প তিনটি। এগুলো সবগুলোই প্রস্তাবিত। এর মধ্যে ঢাকার মুন্সীগজ্ঞের ৫২২ মেগাওয়াট এবং ঢাকা ২৮২ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রামে ২৮২ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ছিল বেসরকারি খাতের ওরিয়ন গ্রুপের।
সরকারি মালিকানাধীন প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মহেশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট, গাইবান্ধা ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট এবং মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্ট ফেইস-২।
আর যৌথ মালিকানার তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর যৌথ মালিকানার ৭ শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিপিজিসিএল-সুমিতমো করপোরেশনের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের যৌথ প্রকল্প ও বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার ১৩২০ মেগাওয়াটের যৌথ প্রকল্প।
সরকার এ পর্যন্ত ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য চুক্তি করে। এরমধ্যে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে ৬ শ’’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১২ শ’ মেগাওয়াটের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বেসরকারি খাতের দুটি কেন্দ্রের নিমার্ণ কাজ চলছে। এ ছাড়া, প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মিরসরাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জানা গেছে, বাতিল হওয়া কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর কোনো কোনোটিকে অন্য জ্বালানিতে রূপান্তরের চিন্তা চলছে। বিশেষ করে তলরীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তরের চিন্তা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভারনাবেল ফোরাম (সিভিএফ)-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বণ নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ছাড়া, জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আর বিনিয়োগ করবে না। এই অবস্থায় সবকিছু মিলিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে ১৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।