করোনাভাইরাসের সংক্রণের উচ্চ ঝুঁকির কারণে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের জালে আটকা পড়তে যাচ্ছে গোটা দেশ, যা কার্যকর হবে আগামী সোমবার থেকে। লকডাউন নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। এই সময়টায় মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আবারও ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু করতেও প্রস্তুত পুলিশ।
আগের কয়েক দফার বিধিনিষেধ ও লকডাউন পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সব বন্ধ করেও ঘরে রাখা যায়নি জনসাধারণকে।
দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এবার অন্তত ১৪ দিন মানুষকে ঘরে রাখতে না পারলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এ জন্য যেকোনো মূল্যে এবারের কঠোর লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। আসছে লকডাউন সব মহলের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ নামে।
জনসাধারণকে ঘরে রাখতে বরাবরের মতো মূল দায়িত্বে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারের একাধিক মন্ত্রী এরই মধ্যে জানিয়েছেন, লকডাউন শতভাগ নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়ন করা হতে পারে বিজিবি ও সেনাবাহিনী। এই সময়ে শ্রমজীবীদের ঘরে রাখতে প্রয়োজনে দেয়া হবে খাদ্যসহায়তা।
কঠোর লকডাউন নিশ্চিতে নিজেদের প্রস্তুত নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে লকডাউনে বাহিনীগুলো কীভাবে কাজ করবে, সেসবের পরিকল্পনা চলছে। অপেক্ষা কেবল সরকারের নির্দেশনার।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, এবারের লকডাউনেও থাকছে ‘মুভমেন্ট পাস’।
করোনা মহামারির ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে লকডাউনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো পুলিশ চালু করে মুভমেন্ট পাস। যদিও এর কার্যকারিতা দেখা গেছে কমই।
অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে লকডাউনে চলাচলকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করত পুলিশ। শুরু থেকেই এই পদ্ধতিতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
অনেককে মিথ্যা অজুহাতে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বাইরে বের হতে দেখা যায়। পাশাপাশি জরুরি সেবার আওতায় থাকা পেশায় নিযুক্তদের সঙ্গে মুভমেন্ট পাস নিয়ে হয় পুলিশের বিতণ্ডা। শেষ পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস থেকে সরে আসে বাহিনীটি।
এবারও লকডাউনে মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা থাকবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া) মো. সোহেল রানা। তবে এই পাসের ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা শুধু শুনেছি সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে। এখনো আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের চূড়ান্ত লিখিত নির্দেশনা পাইনি। সরকারের নির্দেশনার ওপরই নির্ভর করবে আমরা কীভাবে আমাদের কর্মপরিকল্পনা সাজাব। তারপর আমরা সাধারণদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা দিয়ে দেব।’
অন্যবারের বিবেচনায় করোনা মহামারির অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক উল্লেখ করে সোহেল রানা বলেন, ‘জনসাধারণ সচেতন না হলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সত্যিই কঠিন। তবে সরকার যদি আমাদের নির্দেশনা দেয়, তাহলে আমরা কয়েক স্তরের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে থাকব। সাধারণদের ঘরে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা করব। প্রজ্ঞাপন জারির পর সাধারণদের উদ্দেশে বিধিনিষেধের বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।’
প্রস্তুত আছে বিজিবি, র্যাব
অন্যান্য বারের লকডাউনের মতো এবারও জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকতে পুরোপুরি প্রস্তুতি আছে বিজিবি ও র্যাব। বাহিনী দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অপেক্ষায় আছেন সরকারি নির্দেশনার।
আগের বিধিনিষেধ ও লকডাউনগুলোতে মোবাইল কোর্ট ও চেকপোস্টের মাধ্যমে মানুষের চলাচল সীমিত করার চেষ্টা চালিয়েছে র্যাব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা জরিমানাও করেছে। আবার কোথাও কোথাও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে পুলিশের বিশেষায়িত এই উইং। আর বিজিবিকে দেখা গেছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর, ফেরিঘাট ও মহাসড়ক ধরে টহল দিতে।
এবারের লকডাউন শতভাগ সফল করতে বিজিবির প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে বাহিনীটির পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের যেকোনো জরুরি অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নামার জন্য বিজিবি সব সময় প্রস্তুত থাকে।
‘সামনের লকডাউনে সরকার আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সাপোর্ট চাইবে, ঠিক সেভাবেই পাবে। আমরা অপেক্ষায় আছি আমাদের জন্য নির্দেশনা কী আসে। সে অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তা সাধারণদের জানিয়ে দেব।’
শুধু আইনের কড়াকড়ি দিয়ে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তার মতে, ‘জনসাধারণ যদি নিজে থেকে নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় নিয়ে সতর্ক না হয়, তাহলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করেও খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।
‘আগের লকডাউনের সময় আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছিলাম, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছে। তবু মানুষ বাইরে বেরিয়েছিল। তারা বাইরে বেরোনোর জন্য নানান খোঁড়া যুক্তি দেখাত। সাধারণদের রাস্তায় পেলে আমরা হয়তো কঠোর হতে পারি। কিন্তু শুধু নিজেদের উপলব্ধিই তাদের বাসা থেকে বের হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।’
আসন্ন লকডাউনের পরিকল্পনা নিয়ে র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার ওপরই নির্ভর করবে মাঠে আমাদের কর্মতৎপরতা কেমন হবে।’