করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহের শাটডাউন ঘোষণা করেছে সরকার, যা কার্যকর হবে আগামী সোমবার থেকে। এই সময়ে সব অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন এ ঘোষণাকে সরকার কঠোর লকডাউন বললেও সব মহলে পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ নামে।
এ অবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালতে বিচারকাজ কীভাবে চলবে, নাকি বন্ধ থাকবে এ বিষয়ে শনিবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বলা হচ্ছে, রোববার এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, সরকারের ঘোষণা এবং নির্দেশনাবলি দেখে আদালত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, শাটডাউনে আদালত বন্ধ থাকবে, নাকি চলবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এ অবস্থায় চলমান বিধিনিষেধ অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় আরও কঠোর অবস্থানের দিকে এগোচ্ছে সরকার।
শুক্রবার রাতে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন এবং জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন চলাচল।
আদালতের কার্যক্রম প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি। ওনারা (বিচারপতিরা) সার্বিক অবস্থা দেখে, সব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম কীভাবে চলবে বা কী হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রোববার কোর্ট খোলা আছে। হয়তো সেদিন সরকারের নির্দেশনা দেখে প্রধান বিচারপতি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসামাত্রই গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব।’
শাটডাউনের সময়টায় আদালতের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ থাকবে, নাকি ভার্চুয়ালি চলবে, তা নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘ দিন ভার্চুয়ালি চলার পর ২০ জুন শারীরিক উপস্থিতিতে নিম্ন আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। এক সপ্তাহ চলতে না-চলতেই নতুন করে আবার আদালত বন্ধ হয়ে গেলে মামলার জট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা আইনজীবী হিসেবে যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী মানুষ। করোনার কারণে গত বছর থেকে মামলা নিষ্পত্তির হার এমনিতেই কম। তার মধ্যে রয়েছে বিচারকসংকট। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। আমার দাবি হচ্ছে, আদালত একেবারে বন্ধ না করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিটি আরও উন্নত করা হোক।’
সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সে সময় দেশের সব আদালতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর গত বছরের ৯ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ওই বছরের ১১ মে থেকে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
কিছুদিন পর আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ বছরের ১০ আগস্ট থেকে ভার্চুয়াল এবং শারীরিক উপস্থিতি দুইভাবেই হাইকোর্টের পৃথক বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। তারপর থেকে দুইভাবেই উচ্চ আদালত পরিচালিত হয়ে আসছে।
তবে চলতি বছর মার্চে এসে ফের করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়া নতুন করে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এক সপ্তাহ পরই ভার্চুয়ালি সীমিত পরিসরে আদালত খুলে দেয়া হয়।
সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমে আসায় পর্যায়ক্রমে আদালত যখনই খুলতে শুরু করল। তখনই নতুন করে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ বাড়তে থাকে। যার কারণে সরকার আবারও কঠোর বিধিনিষেধ বা শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।