করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের শাটডাউন। শুক্রবার রাতে এমন ঘোষণার পর শনিবার সকাল থেকে মাওয়া ফেরি ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।
অনেক দিন পর শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর বেড়াতে গিয়েছিলেন আলেয়া বেগম। দুই দিনও থাকতে পারেননি। এর মধ্যে আসলো শাটডাউনের ঘোষণা। সেই থেকেই ফোনে স্বামীর পীড়াপীড়ি। বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফিরলেন আলেয়া।
মাওয়া ঘাটে নিউজবাংলাকে পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জের ভাড়াটিয়া বলেন, ‘আমার জামাই থাকে ঢাকায়, ব্যবসা করে। গেছিলাম শ্বশুর বাড়ি বেড়াইতে। শাটডাউনের কথা শুইন্যা আমার জামাই আমারে ফোন কইরা ফাগল বানায়ালাইসে। ফোনের পর ফোন।
‘আজকা যদি না আইতাম, ৭ দিনের শাটডাউনে আকটা পড়েলে আমার জামাই আমার সংসারটাই ভাইঙা ফালাইতো। কষ্টমষ্ট করে নদী পার অইসি, বাকিটা আল্লা ভরসা। কোন চ্যানেলে দেহাইবেন কয়া যান, আমি বাইতগ্যা টিভি দেখমু।’
সকাল থেকে মাওয়া ঘাটে দেখা যায়, ঢাকামুখী ফেরিগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। আর যেগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলোতে তেমন কোনো ভিড় নেই। ঘাটের মানুষদের ৯০ ভাগই ঢাকায় আসছেন। তারা বলছেন, বাড়িতে দীর্ঘ সময় আটকা পড়ার ভয়ে জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় ফিরে এসেছেন।
ছয় মাস পর বাড়ি গিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মো. ফাহিম। কিন্তু একদিনের বেশি থাকা হয়নি তার। রাতে শাটডাউনের খবর শুনে সকাল বেলায়ই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।
মাওয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিগুলোতে যাত্রীদের তেমন কোনো চাপ নেইবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফাহিম বলেন, ‘আমরা ভাবতে পারি নাই। হঠাৎ শাটডাউন দিয়ে দেবে। আমার ভাজিতার খৎনা ছিল। তিন দিনের ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম। এক থেকেই ফিরে আসলাম।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিধিনিষেধ অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় আরও কঠোর অবস্থানে গেল সরকার। আগামী সোমবার থেকে ৭ দিনের জন্য সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এমনকি এই সময়টায় অপ্রয়োজনে মানুষের চলাফেরাও নিষেধ করা হয়েছে। এই কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়নের ভাবনা রয়েছে সরকারের। এটাকে সরকার কঠোর লকডাউন বললেও পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ হিসেবে।