শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। আজ থেকে ২৭ বছর আগে ১৯৯৪ সালের এই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
মানবতার জয়গান গাওয়া এই মহীয়সী নারী সবার কাছে শহীদজননী হিসেবেই পরিচিতি পান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে জাহানারা ইমামের অবদান অনেক। স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর প্রজন্ম তার কাছে ঋণী থাকবে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমীকে হারান তিনি। স্বামী শরীফ ইমামকেও পাকিস্তানি হানাদাররা নির্মম নির্যাতন করে আহত অবস্থায় মুক্তি দেয়। বিজয়ের তিন দিন আগে শরীফ ইমাম মারা যান।
বিজয়ের পরে রুমীর বন্ধুরাসহ সব মুক্তিযোদ্ধা তাকে তাদের জননী বলে সম্বোধন করেন। সেই থেকে তিনি পরিচিতি পান শহীদজননী হিসেবে।
স্বাধীনতা-পরর্বতী রাজনৈতিক ইতিহাসেও ছিল শহীদজননী জাহানারা ইমামের অবিস্মরণীয় অবদান।
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর একাত্তরের ঘাতক গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ঘোষণা করা হলে শুরু হয় জনবিক্ষোভ। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। যার নেতৃত্বে ছিলেন শহীদজননী জাহানারা ইমাম।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্রসংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। এই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম।
কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ‘গণ-আদালত’-এর মাধ্যমে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ঘাতক গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠান করে। গণ-আদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত গণ-আদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
এরপর তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯২ সালের ২৮ মার্চ শহীদজননী জাহানারা ইমামসহ বিশিষ্ট ২৪ নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে। তারপরও থেমে থাকেনি সে আন্দোলন।
দেশব্যাপী চলতে থাকে গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ ভবন অভিমুখে যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ কর্মসূচি।
এভাবেই তারই নেতৃত্বে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলন দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকতা পায়।
আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে দিতেই হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহানারা ইমাম। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি নিয়মিত আন্দোলনের খোঁজখবর নিতেন।
১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল জাহানারা ইমামকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয়। মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন শহীদজননী।