বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা চান জীবিকার নিশ্চয়তা

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২১ ২৩:৪০

‘আবারও লকডাউন বা শাটডাউন হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এই নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে আমরা সরকারকে শাটডাউন না দেয়ার জন্য বলতেও পারছি না, কারণ করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হচ্ছে -তা থামাতে হলে এই শার্টডাউন দরকারও আছে।’

শাটডাউনের নামে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে সারাদেশ।

শাটডাউনে নিয়ন্ত্রিত হবে মানুষের চলাফেরা। যা গড়াতে পারে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত। এই নিয়ে শঙ্কিত দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। কারণ এর ফলে আবারও বন্ধ হবে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত। ঘুরবে না গাড়ির চাকা। বন্ধ হওয়ার শঙ্কা আছে শিল্প-কারখানাও। এটা হলে থেমে যাবে উৎপাদন। বিঘ্নিত হবে সরবরাহ ব্যবস্থা। টান পড়বে মানুষের আয়ে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় পড়বে দেশে অনানুষ্ঠানিকখাতের অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ। সামনে কোরবানির ঈদ। মানুষ আশায় আছে। আনুষ্ঠানিকখাতে বেতন-বোনাসের বিষয় আছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে বেশি আয়ের আশায় অনেকে আগে থেকেই কর্মঘণ্টায় বাড়তি শ্রম দিয়ে আসছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আগে প্রণোদনা, পরে শাটডাউন। আর অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন জীবনের জন্য দেয়া শাটডাউনে যাতে সবার জীবিকা স্বাভাবিক থাকে। সে বিষয়ে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে মনোভাব জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবারও লকডাউন বা শাটডাউন হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এই নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে আমরা সরকারকে শাটডাউন না দেয়ার জন্য বলতেও পারছি না। কারণ করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হচ্ছে—তা থামাতে হলে এই শার্টডাউন দরকারও আছে।’

এ সময় তিনি হতাশাও ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা যদি আগের লকডাউনগুলোতে ডিসিপ্লিন মেনে চলতাম, সরকারও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে পারতো, তাহলে আবারও শাটডাউন পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হতো না।

এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, ‘শাটডাউন করোনার একটা সাময়িক উত্তরণ মাত্র। দীর্ঘমেয়াদে এবং স্থায়ীভাবে উত্তরণের জন্য সরকারকে অবশ্যই সর্বাগ্রে ভ্যক্সিনেশন কাযক্রমেই জোর দিতে হবে।’

‘আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষ এখন মাস্ক ব্যবহার করে না। কারণ তারা শতভাগ ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় এসেছে। আমাদেরকেও যেকোনো মূল্যে টিকা নিশ্চিত করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শাটডাউন যদি দিতেই হয় তাহলে অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাতগুলোকে সচল রাখতে হবে। বিশেষ করে জরুরি সেবার পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধির নিশ্চয়তার মাধ্যমে মিল-কারখানাগুলোও যেন চালু থাকে। আবার যেসব খাত বা যারা শাটডাউন পরিস্থিতির মুখে পড়বে, তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আর্থিক সহায়তা কার‌্যক্রমে রেখে তাদের জীবন-জীবিকা সচল রাখতে হবে।’

করোনা প্রকোপে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা এখনই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই জানিয়ে আবারও শাটডাউনে আরও অনিশ্চয়তায় পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

এ প্রসঙ্গে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শার্টডাউনের আগে প্রণোদনার জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও বৃহ—সব খাতের জন্য প্রণোদনা রাখতে হবে। একই সঙ্গে ফরমাল সেক্টরের পাশাপাশি ইনফরমাল সেক্টর এবং দারিদ্র জনগোষ্ঠীকেও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মর্সূচির আওতায় প্রণোদনা দিয়ে জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

‘তবে জীবন বাঁচাতে আবারও লকডাউন বা শাটডাউন যাই বলি না কেন তা দরকার আছে। কারণ করোনা আগামী দুই-তিন বছরে যাবে না। তাই দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে শাটডাউন কঠোরভাবে প্রয়োগেরও দরকার।’

অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশ শাটডাউন থাকা মানে দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. নাজনীন আহমেদ জানান, ‘জীবন বাঁচানোর প্রশ্নে আমাদেরকে এই ক্ষতি মেনে নিতেই হবে। আবার এটাও সত্য ৭-১৫ দিনের লকডাউন কোনো সমাধান নয়। সমাধান হলো, জনগণকে কঠোরভাবে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা এবং যতদ্রুত সম্ভব টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন করা।’

ড. নাজনীন জানান, ‘ঘোষিত শাটডাউনে মানুষের জীবিকা যাতে বিপন্ন না হয় তার জন্য সরকারকে আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য নগদ অর্থ এবং খাদ্য উভয়ই প্রস্তুত রাখতে হবে। একই সঙ্গে এগুলোর বণ্টন ব্যবস্থা কীভাবে হবে এবং কতটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে তা ঠিকঠাক করেই শাটডাউনে যাওয়া উচিত।

এ বিভাগের আরো খবর