সৌদি সরকারের নেয়া সংস্কার কর্মসূচি কাজে লাগিয়ে সে দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
রিয়াদ দূতাবাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করে সৌদি সরকার শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসাসহ নানা খাতে সংস্কার শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ অন্যতম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরব ব্যবসা, অর্থনীতি ও বিনিয়োগের সুযোগ সংস্কার করেছে, যা কাজে লাগিয়ে আমাদের অনেক অভিবাসী সেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ নিতে পারেন।’
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সৌদি আরব বাংলাদেশের বিশ্বস্ত অংশীদার। সৌদির শ্রমবাজারকেন্দ্রিক সহযোগিতার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে, যা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
‘সোনার বাংলাকে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে আমরা আমাদের সহযোগিতার ভিত্তিকে সহজেই শ্রমবাজার থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে রূপান্তর করতে সক্ষম হব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের ১৭০টি দেশে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স করোনা মহামারিতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। অভিবাসীদের সুবিধার্থে সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে।’
‘২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠন ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন’ শিরোনামে ওই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
‘২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠন ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন’ শিরোনামে ওই ওয়েবিনারে যুক্ত অতিথিরা।
আবদুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা কোনো কল্পকাহিনি নয়, ভিশন ২০৪১ হলো সোনার বাংলা বাস্তবায়নে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবার একটি পরিকল্পনা।
‘যে দেশের অর্থনীতিকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল, আজ সে দেশের অর্থনীতি বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
সরকারের ভিশন ২০২১ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার মূলমন্ত্র হিসেবে গত এক দশকে দেশের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ভিশন ২০৪১ হাতে নেয়া হয়েছে যা আগামী দুই দশকে উন্নত বাংলাদেশ তথা সোনার বাংলা গড়ায় অবদান রাখবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, যাতে সৌদিতে বসবাসরত প্রায় ২৩ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী ও সৌদি নাগরিকরা সম্পৃক্ত ছিলেন।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বৃদ্ধি, বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।
তিনি ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
এ ছাড়া প্রবন্ধে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ইতিবাচক রিপোর্ট তুলে ধরা হয়।
আয়োজনে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষের (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ এবং সৌদি ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এন হিজ্জি।
ওয়েবিনার পরিচালনা করেন দূতাবাসের মিশন উপপ্রধান এস এম আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তারা যোগ দেন।
এ ছাড়া রিয়াদে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।