সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বিকেলে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গভবন প্রেস উইং জানিয়েছে, সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত সেনাপ্রধানকে অভিনন্দন জানান।
এ সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দুর্যোগসহ সংকটময় মুহূর্তে জাতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সবসময় এগিয়ে এসেছে।’
জনগণের প্রয়োজনে সব সময় পাশে দাঁড়াতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন সেনাপ্রধানের পেশাদারিত্ব ও নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আগামীতে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের বাহিনীতে পরিণত হবে এবং জাতির প্রয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
দায়িত্ব পালনে নতুন সেনাপ্রধানের সফলতা কামনা কামনা করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
এ সময় নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতির দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘জেনারেল’ র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
বিকেলেই সদ্যবিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নেন তিনি। আগামী তিন বছর সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলায় জন্ম নেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতার আগে একনাগাড়ে দুই যুগ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৮৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে নবম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে কমিশন লাভ করেন। কমিশনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।
ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজে প্রথম বিভাগসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বিইউপিতে পিএইচডি করছেন তিনি।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন।
এনডিইউ, ওয়াশিংটন থেকেও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি। তার বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিস্টিকস ফরমেশন এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন তিনি।
এ ছাড়াও একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (বিআইআইএস) মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাবাহিনীর একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড নেশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্য সেন্ট্রাল আফ্রিকায় (মিনুস্কা) বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে সেনাসদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের বাবা জেনারেল শফিউদ্দিন।