করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্র সংক্রমণ ঠেকাতে সংক্রমিত এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের পশুর হাটে প্রবেশে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য যেখানে-সেখানে হাট বসতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
ঈদুল আজহাসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রী এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পশুর হাটে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এখন অতিমারি চলছে, দেখছেন। আমাদের দক্ষিণাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল- সব জায়গায় কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি। সবখানে একটা অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসব জায়গা থেকে গরুর ব্যাপারীরা আসবেন, তারাও যেন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঢাকায় আসেন সেদিকে আমরা নজর রাখব।’
এবার সিটি করপোরেশন পশুর হাটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে যত্রতত্র হাট বসত, এবার যত্রতত্র হাট বসতে দেয়া হবে না।’
এবার অনলাইনে গরু বিক্রিকে উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং হাইওয়েতে যানচলাচল নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বৈঠকটি হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সাধারণত ঈদের আগে সভাটি করা হলেও এবার করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে আগেভাগেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানালেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে আরও যদি কোনো স্পেশাল অ্যাকশন নিতে হয় সে জন্য আগেভাগে সভা করেছি।’
সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
০১. ঈদুল আজহায় সরকারি বন্ধে মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
০২. চুরি-ডাকাতিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারিসহ পুলিশ ও র্যাবের টহল বাড়ানো হবে।
০৩. সারা দেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে করোনা বিবেচনায় অনলাইন কেনাকাটায় উৎসাহ দেয়া হবে।
০৪. হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
০৫. পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ এবং অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যবসায়ীদের টাকা পরিবহনের জন্য পুলিশ সহযোগিতা করবে।
০৬. মহাসড়ক, সড়ক ও শহর এলাকায় যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে। যানজটপ্রবণ স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।
০৭. ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশুবাহী নৌযান, ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে নজরদারি থাকবে। পশুবাহী যানবাহনকে জোরপূর্বক যেখানে-সেখানে থামানো যাবে না।
০৮. ঈদের ছুটিতে দেশের শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিল্প এলাকায় যেকোনো নাশকতা রোধে গোয়েন্দা বাহিনীও সজাগ থাকবে।
০৯. আরিচা-দৌলতদিয়া, মাওয়া-বাংলাবাজারসহ সকল ফেরি ঘাটে যান পারাপারে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সে জন্য আগাম প্রস্তুতি থাকবে। নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
১০. পশুর চামড়া কেনাবেচার সিন্ডিকেট রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেবে। চামড়া পাচার রোধে চামড়া যেন সীমান্ত অভিমুখে না যেতে পারে সে ব্যবস্থাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করবে।
১১. ঈদ উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল, মসলা ইত্যাদি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও ভেজাল মেশানো রোধে প্রয়োজনীয় মোবাইল কোর্ট থাকবে।
১২. ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়ক শিল্পাঞ্চল এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ও যেকোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকবে।
১৩. গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট সময় দেয়ার জন্য বিজিএমইএ বিকেএমইএ ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান করা হয়েছে।
১৪. পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে অতিমারি করোনা মোকাবিলায় যে নির্দেশনা জারি করবে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সবাই প্রস্তুত থাকবেন। সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘সভায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা ছিলেন। তারাও নিশ্চয়তা দিয়েছেন, গতবারের মতো এবারও তারা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করবেন।’