বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুব কড়া গাজীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট

  •    
  • ২৩ জুন, ২০২১ ১৬:৩১

সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ফ্যাক্টরির কথা বললে সেটা আমি অ্যালাউ করব না। প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা আছে সার্বিক লকডাউনের কথা।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার দ্বিতীয় দিনে নগরীতে ঢোকার অন্য প্রবেশমুখগুলো থেকে একটু আলাদা চোখে পড়েছে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা।

জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন বা ব্যক্তিকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি গাজীপুরেও প্রবেশ করতে দেয় হয়নি কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি, ব্যক্তি কিংবা পরিবহন।

টঙ্গীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাব্বির আহমেদ বুধবার সকাল থেকেই অবস্থান নেন টঙ্গী বাজারে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ সময় তিনি শুধু জরুরি পরিষেবার গাড়ি বা ব্যক্তিকে ছাড় দিয়েছেন।

এতে অবশ্য ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে অনেককে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় কঠোর লকডাউন। পাশাপাশি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ীতেও শাটডাউন আরোপ করা হয়। এ অবস্থা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এক সপ্তাহের লকডাউনে সাত জেলায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনে বিধিনিষেধ থাকবে না।

হঠাৎ করে আসা ঘোষণায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে। বাসের সীমাবদ্ধতা না জেনে অনেকেই ভিড় করেন বাসস্ট্যান্ড ও বাস টার্মিনালগুলোতে। তবে এক দিন পর কিছুটা বদলে যায় সেই চিত্র।

ঢাকা থেকে গাজীপুর প্রবেশের পথ টঙ্গীতে অবস্থান নিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহপুর মোড়ের ঢাকার পরিবহনগুলো তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে আবার ঢাকায় ঢুকছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্য পরিবাহী ট্রাক, পিকআপ টঙ্গী ব্রিজ পার হলেও বাধার মুখে পড়ছে পুলিশ চেকপোস্টে।

সেখানে অবস্থান নিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির আহমেদ। বেশি কড়াকড়ি আরোপ করায় ব্যক্তিগত গাড়ি বা অফিশিয়াল গাড়িতে একজনের যাতায়াতও বাধা দেয়া হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প এলাকা বলে বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ির আবেদন তাদের যেন চলতে দেয়া হয়। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া দেয়নি প্রশাসন। এ জন্য অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই দেখা যায়, বাটা কোম্পানির একটি গাড়ি আটকে দেন ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির। অনুনয় করলেও মেলেনি চলার অনুমতি।

এমন সময় বাটার এক কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির আহমেদের সঙ্গে তর্কে জড়ান।

ওই কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রজ্ঞাপনের কথা মনে করিয়ে বলেন, ‘আপনি এভাবে গার্মেন্টস রিলেটেড গাড়ি বা ব্যক্তিকে আটকাতে পারেন না। একটা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন আচরণ মানায় না। আমি না গেলে আমার কোম্পানির ক্ষতি হবে।’

উত্তরে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘ফ্যাক্টরির নামে ইনডিভিজুয়াল গাড়ি আমি যেতে দেব না। আপনি চাইলে আবার প্রজ্ঞাপন দেখেন। সেখানে সার্বিক লকডাউনের কথা বলা আছে।’

একটা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির আহমেদ ওই কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করেন।

অনেকেই যানবাহন না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

একই রকম সুবিধা পেতে আরেকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্তা মো. সাঈদ ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। অবশ্য তাকেও গাড়ি নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।

টঙ্গী ব্রিজের আগে আব্দুল্লাহপুর অংশ থেকে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেশির ভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি বা মাইক্রো। অধিকাংশ গাড়ির ওপরে বিভিন্ন কোম্পানির স্টিকার লাগানো। ভেতরে একজন বা দুজনের উপস্থিতি ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচলিত করতে পারেনি।

ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের এখানে অ্যালাউ করা হয়েছে শুধু পণ্যবাহী ও জরুরি পরিষেবা। এখানে অনেকেই আসছেন যে আমাদের ফ্যাক্টরির গাড়ি।

‘আসলে সেগুলোকে জরুরি পরিষেবা বলা যাবে না। বিশেষ ব্যবস্থায় গার্মেন্টস বা শ্রমিকদের যাওয়া-আসার জন্য সরকার থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। সে ক্ষেত্রে আমরা সেটা অ্যালাউ করব।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ফ্যাক্টরির কথা বললে সেটা আমি অ্যালাউ করব না। প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা আছে সার্বিক লকডাউনের কথা।’

কাল ট্রেনে, আজ হেঁটে

লকডাউনে বেশি বিপাকে রয়েছে সাধারণ মানুষ। শুধু ঢাকায় ঢোকা বা বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করায় একধরনের ভোগান্তি শুরু হয়েছে।

পরিবহন সব বন্ধ থাকলেও ভ্যান কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাত্রীরা গাজীপুরে ঢুকছেন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

গতকাল রাতে ট্রেনে ভোটার আইডি কার্ডের কাজে জয়দেবপুর থেকে ঢাকা এসেছিলেন ছোটন। বুধবার থেকে ট্রেন বন্ধ থাকায় তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কোনোভাবে আব্দুল্লাহপুর আসলেও এখন যাওয়ার কোনো রাস্তা তার জানা নেই।

ছোটনের মতো সমস্যায় রয়েছেন মিনহাজুল করিম। সোমবার গাজীপুর থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আসেন। এখন যাওয়ার জন্য তাকে যে ধকল পোহাতে হচ্ছে, এতে আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।

লকডাউনে কেন তারা ঘরের বাইরে এমন প্রশ্নে মিনহাজ বলেন, ‘অসুস্থতার তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই। আপনি আমাকে না জিজ্ঞেসা করে এই রাস্তায় আর যারা আছে সবাইকে বলেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এত কষ্ট করে কেউ ঘর থেকে বের হয় নাকি।’

এখন যাত্রায় তাই সঙ্গী সিএনজি আর ভ্যান। ভাড়া দ্বিগুণ দিলেও একটু দূরের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে।

নিউজবাংলা খোঁজ নিয়েছে কীভাবে মানুষ গাজীপুর ঢুকছেন। টঙ্গী ব্রিজ পার হলে গাজীপুর যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা থেকে গাজীপুরমুখী বাসগুলো আব্দুল্লাহপুর এসে ঘুরিয়ে নিলেও সাধারণ যাত্রীরা এই পাশে এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া ২০০ টাকা করে নিচ্ছে।

ঢাকায় চিকিৎসা করাতে এসে অনেক পরিবার গাজীপুরে ফেরার সময় বিপাকে পড়ে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নিউজবাংলাকে বলেন, যারা গাজীপুর যাবেন তারা এখান থেকে সিএনজিতে উঠছেন। চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনো ঝামেলা থাকে না। আবার ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটেও আব্দুল্লাহপুর হয়ে ভেতর দিয়ে মাইক্রো নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।

সাব্বির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখেন আপনি তো এভাবে কোনো মানুষকে আটকাতে পারবেন না। একটা লোককে তো রাস্তায় রেখে যেতে পারব না। তাদের তো বের হয়া উচিত হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর