জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা টেবিল-চেয়ার না যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম। এটা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এনআইডি সেবা হস্তান্তরের প্রজ্ঞাপন হয়ে গেলেও আলোচনার সুযোগ থাকছে কি না এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকছে।
অনেক বড় প্রতিষ্ঠান তো এটা। কীভাবে নেবে না নেবে এ বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা তো টেবিল-চেয়ার না যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম। বসতে হবে।
এনআইডি সেবা চলে গেলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অসুবিধা হবে।’
সিইসি বলেন, ‘নিশ্চয়ই সচিব পর্যায়ে এ বিষয়ে কথাবার্তা হবে। আমাদের সুবিধা- অসুবিধাগুলো তাদের জানাব।’
কমিশন থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল, তার উত্তরে তারা কী বলেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা শুধু বলেছেন যে আগের সিদ্ধান্তেই আছেন। এটার ওপরে অনেক কাজ রয়েছে। আমাদের সঙ্গে উনারা বসবেন, অবকাঠামো নিয়ে হিসাবপত্র আছে সেগুলো নিয়ে প্রক্রিয়া আছে তার ওপরে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা তো আমাদের অবস্থান অনেক আগেই বলেছি।’
‘জাতীয় ভোটার দিবসের’ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে এ রকম বলা যায় না। তারা নিতে চায় আমরা দেব না, এ রকমও বলা যায় না। সেই রকম অবস্থানে আমরা নেই। আমাদের বসতে হবে তাদের সঙ্গে, এটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কথা। বসলে আমাদের যে অবস্থান সেটা তাদের বোঝাব, সিদ্ধান্ত কী হবে তখন দেখা যাবে। এটা তো আগেই বলা যাবে না।’
‘সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেবিনেট তো আমাদের কাছে উচ্চ পর্যায়। কেবিনেট থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি। তাদের আমরা উত্তর দিয়েছি। আমরা এই পর্যায়ে আছি। তারা যদি এ বিষয়ে আমাদের কাছে মতামত অথবা পরামর্শ বা তারা কী করতে চায়, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের সচিবের সঙ্গে বসে তখন আমাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই কথা তো আমি বলেছি অনেকবার যে, কমিশন চায় এনআইডি আমাদের কাছে থাকুক।’
সিইসি বলেন, ‘সরকার কী যুক্তিতে চায়। তাদের অবশ্যই কিছু যুক্তি আছে। আমাদেরও কিছু যুক্তি আছে, এগুলো নিয়ে সংলাপ হবে। তাদের বক্তব্য হলো, এই সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে না এবং সেই যুক্তিটা ঠিক। আসলেই অন্য কোনো দেশে এটা থাকার বিষয় না।
‘আর আমাদের যুক্তি হলো, এই কাজটা আমাদের অনেক পরিশ্রমের ফসল। এই কাজটা করার জন্য আমাদের কয়েক হাজার নিবেদিত কর্মী তৈরি হয়েছে এবং তারা অত্যন্ত প্রফেশনাল। এত দিনের ভুলভ্রান্তি শেষে সব পেরিয়ে অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তিসম্পন্ন কাজ তারা তৈরি করতে পেরেছেন। এটার জন্য নির্বাচন কমিশন গর্ববোধ করে। তারা এর জন্য আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলেছিলাম যে, এতগুলো লোক আবার তৈরি করা, আবার ১২ বছর ঘুরে অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টের পক্ষে সম্ভব না। তাদের যুক্তি হলো সরকারের জিনিস তারা নিয়ে যাবে। তোমরা তো সরকার না। আমরা বলি আমরা সরকার না কিন্তু সরকারের যখন যা দরকার হয়, আমরা সরকারকে সেসব সেবা দিতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছে সেটা হলো তারা নিয়ে যেতে চায়। আমাদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে। কীভাবে নেবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সেখানে আমাদের আরও যেসব যুক্তি আছে সেগুলো তুলে ধরব। এরপর সরকার কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে বা না নেবে সেটা তো পরের কথা।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডায়লগে বসতে হবে। তারাই প্রপোজাল দেবে।’
ইসিতে রাখার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলা যাবে না। আমাদের যু্ক্তি হলো এই রকম অভিজ্ঞ লোকেরা এগুলো তৈরি করেছে। তাদের আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। আমাদের যে লোকগুলো আছে তাদের মাধ্যমে সেবা যদি দিতে পারি তাহলে ভালো হবে। এটা আমাদের যুক্তি। ইভেনচুয়ালি কী হবে না হবে এটা এখনই বলা যাবে না।’