বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অলস ৩১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে

  •    
  • ২২ জুন, ২০২১ ২১:৪২

গত দুই অর্থবছরে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে মোট ৩১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অলস অর্থ সচল হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে দেশ। এভাবে দেশে পুঞ্জিভূত অলস অর্থের পাহাড়ে ধস নামাতে সরকার পরিকল্পিত রূপরেখা নিয়ে এগোচ্ছে। 

দেশে অলস অর্থের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। ওই টাকা এখন উৎপাদনশীল ও সেবা সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রকল্পসহ জনকল্যাণমূলক নানা কাজে সরকারিভাবে ব্যয় করা হচ্ছে।

গত দুই অর্থবছরে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে মোট ৩১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অলস অর্থ সচল হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে দেশ। এভাবে দেশে পুঞ্জিভূত অলস অর্থের পাহাড়ে ধস নামাতে সরকার পরিকল্পিত রূপরেখা নিয়ে এগোচ্ছে।

সরকারের ব্যয় নির্বাহে আগামীতে আরও বেশি অলস অর্থ সংগ্রহ করতে প্রতি বছর একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগোচ্ছে সরকার। যার যোগানদাতা হিসেবে কাজ করবে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন হিসাবের অনুকূলে ২০১৯ সালে পুঞ্জিভূত অলস অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে জমা পড়ে।

এই টাকা এতদিন জনকল্যাণমূলক কোনো কাজে বা লাভজনক কিংবা সেবা সরবরাহকারী কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছিল না। ফলে দিনদিন এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অলস অর্থের জমা বেড়েই চলছিল।

এখন সময় পাল্টেছে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ডে বছরের পর বছর অলস পড়ে থাকা এসব রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের অর্থ এখন রাজকোষে (জাতীয় ট্রেজারি একক হিসাবে) আসতে শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা জমা পড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেট বড় হচ্ছে। কিন্তু সেই বিবেচনায় আয়ের সংস্থান সমানভাবে আসছে না। অনেক প্রকল্প রয়েছে যেগুলো আর্থিক সংকটের কারণে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশেই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে দুই লাখ কোটি টাকার অধিক অলস অর্থ পড়ে আছে, যার কোনো উৎপাদনশীল বা জনকল্যাণমূলক ব্যবহার নেই। অথচ সরকারের অভিষ্ট লক্ষ্যই হলো জনকল্যাণে ব্যয় করা।

‘সেই ব্যয়ের সংস্থান হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ জাতীয়ভাবে পরিচালিত একটি হিসাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্যই হলো সরকারের ভাণ্ডারকে শক্তিশালী করা।’

এর আগে অলস অর্থ সরকারের একক হিসাবে আনার পথ সুগম করা হয়। এ লক্ষ্যে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়। যা ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই কার্যকর হয়।

নতুন আইনটি কার্যকর হওয়ার পরে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাসমূহ এবং সরকারি অ-আর্থিক সংস্থাগুলো থেকে গত দুই (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) অর্থবছরে ৩১ হাজার ২৫০ কোটি অলস টাকা রাজকোষে (জাতীয় ট্রেজারি হিসাব) জমা পড়ে।

২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা নেয়া বা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের ১১ মাসে (মে, ২০২১ পর্যন্ত) ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরেও সরকার ১৬ হাজার কোটি অলস টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করার জন্য জাতীয় একক ট্রেজারি হিসাবে আনতে চায়।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার মাধ্যমে মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব আদায় ২৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

অন্যদিকে করোনার কারণে সরকারকে মোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। এই প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ সরকারের সার্বিক ব্যয় নির্বাহে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ৩১ হাজার ২৫০ কোটি নগদ অর্থ জাতীয় একক হিসাবে জমা হওয়ায় সরকারের পরিচালন ব্যয় সমন্বয়ও অনেকটা সহজ হয়েছে।

আইনটি তৈরির আগে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অলস অর্থ ছিল ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ছিল ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার কাছে ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা আর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে ছিল ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বার্ষিক ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা রাখার বিধান রয়েছে। আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের ২৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ এবং পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ অর্থ রাখার বিধান রয়েছে। এর বাইরে যে অর্থ থাকবে সেটাই অলস বা উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর