করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের মানুষ। তবে চলমান মহামারির মধ্যেও কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলছে সরকার। দেশের পশু দিয়েই মেটানো যাবে কোরবানির পশুর চাহিদা।
দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত আছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পশুগুলোর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার। ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। অন্যান্য পশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৭৬৫।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর প্রয়োজন হবে, তারচেয়ে অনেক বেশি পশু দেশে রয়েছে। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে, যা কোরবানির জন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে হাটবাজারে বিভিন্ন স্থানে নেয়া হবে।’
গত বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ পশু। তবে হাট থেকে মানুষ কিনেছিল এক কোটির চেয়ে সামান্য সংখ্যক বেশি পশু। মন্ত্রী বলেন, এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় আমদানির প্রয়োজন নেই। তাই বন্ধ থাকবে পশু আমদানি।
দেশের অভ্যন্তরে খামারিরা যে পশু উৎপাদন করেছে তা দিয়েই আমাদের কোরবানির চাহিদা মেটানো সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশি কোনো দেশ থেকে কোরবানির পশু আমদানির কোন প্রয়োজন হবেনা। চোরাইপথেও যাতে কোনো কোরবানির পশু ভারত-মিয়ানমার বা অন্য কোন দেশ থেকে না আসতে পারে এজন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশ র্যাব এবং বর্ডারগার্ড সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকবে।’
কোরবানি ঈদকে ঘিরে সীমান্তে চোরাচালানকারিদের তৎপরতা বন্ধে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কী-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনোভাবে যেন দেশের বাইরে থেকে কোনো গবাদিপশু দেশের ভেতরে না আসতে পারে সেজন্য বর্ডার গার্ড, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব কাজ করছেন। আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট থাকবে। ফলে অঘোষিত কোনো পথ থেকেও কোনোভাবে গবাদিপশু বাংলাদেশের প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করছি।’
মন্ত্রী বলেন, কোরবানির পশু যাতে রোগাক্রান্ত না হয় এজন্য ১ হাজার ২০০ মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। প্রতিটি মেডিক্যাল টিমে একজন করে ভেটেরিনারি সার্জন থাকবেন, সঙ্গে থাকবেন অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও।
‘বাজারে অথবা বিক্রয় কেন্দ্রে যে পশুটি আসুক, সেটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে রোগগ্রস্ত কী-না। কারণ রোগগ্রস্ত একটা পশুর মাংস অন্য কেউ খেলে, সেটা তার শরীরেও প্রবাহিত হতে পারে।’
পশু বিক্রি ও ব্যবস্থাপনা এবং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো জটিলতা বা সমস্যা তৈরি না হয় সেজন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানির হাট বসানো হলেও অনলাইনে পশু বিক্রিকে উৎসাহিত করতে চায় সরকার।
সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে খোলা জায়গায় পশুর হাট বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘গতবার অনলাইনে গরু বিক্রিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমি নিজেও কয়েকটা অনলাইন গরুর বাজার উদ্বোধন করেছি। কেনা বেচাও হয়েছে। সেটাকে এবার আরও বেশি প্রমোট করা ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
পশুর হাট সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত খোলা জায়গা আছে, বা যেখানে করলে মানুষের সংক্রমণ ঝুঁকি থাকবে না সেখানেই করা হবে। স্থানীয়ভাবে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, তারা সবাই মিলে মিটিং করবে। মিটিং করে স্থানগুলো নির্ধারণ করবে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করি বলেন, ‘কোরবানির নির্ধারিত হাটের বাইরে রাস্তা ঘাটেও যদি কেউ গবাদি পশু বিক্রি করতে চান, বা তার নিজের বাড়িতে বসে বিক্রি করতে চান সেটা অনুমোদন দেয়া হবে।’
হাটের সংখ্যা বাড়ানো হবে কী-না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে যেখানে যেখানে দরকার হবে, মানুষের সুবিধা হবে, সেখানে বসানো হবে।’
সীমান্তবর্তী জেলা এবং দেশের কোনো স্থানে লকডাউন কার্যকর থাকলে সেখানে ‘তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত’ নেয়া হবে বলে জানান তাজুল ইসলাম।